• রুদ্র লাল মিশছে ভালোবাসার হলুদে! জল্পেশে সুপারহিট নয়া তিলকের ট্রেন্ড
    এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৫
  • অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি

    ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মন ভালো নেই। বছরের পর বছর তাঁদের দল ফুটবল মাঠে সাফল্য পাচ্ছে না। ক্রমশ ফিকে হচ্ছে লাল–হলুদ। সমর্থকদের কেউ এ বার জল্পেশ মেলায় এলে মন খারাপ কাটিয়ে যেতেই পারতেন। শিবরাত্রির মেলায় এ বার সুপারহিট লাল–হলুদের নিশান। মহা শিবরাত্রি ছিল ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে।

    জল্পেশ মন্দির চত্বরে সে দিন থেকেই জমে উঠেছে মেলা। জেলা পরিষদের মেলা রবিবার শেষ হয়ে গেলেও মন্দিরের সামনে দোকানপাট থাকবে দোলপূর্ণিমা পর্যন্ত। শিবরাত্রির উপাসনা থেকে দোলের উৎসবকে মিলিয়ে দিচ্ছে লাল–হলুদ রং। শিবের রক্তিম রুদ্র রূপের লাল যেন মিলে যাচ্ছে রাধা–কৃষ্ণের অমর প্রেমের হলুদ মোহনায়। তাকেই যেন উদযাপন করছে লাল–হলুদ তিলকের নয়া ট্রেন্ড। সেটাই এ বার মন কেড়েছে আমজনতার। নতুন পদ্ধতিতে তিলক কাটছে অনেকেই। চন্দন কিংবা সিঁদুর নয়, মন্দিরে পুজো দিতে এসে লাল–হলুদে মজেছেন পুণ্যার্থীরা।

    বাঙালির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিলক দেওয়ার রেওয়াজ আছে। তবে সেটা সিঁদুর, আতপ চাল সহযোগে দেওয়া তিলক। জল্পেশ মন্দিরের ভিতরে ঢুকলে ভক্তের কপালে এঁকে দেওয়া হয় লাল সিঁদুরের তিলক। এ বার তা হচ্ছে। কিন্তু মন্দির থেকে বেরোলে লাল–হলুদের হাতছানি। মেলা চত্বরে প্রায় ২০–২৫ জন তিলক–কাটার শিল্পী ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এঁরা মন্দিরে আসা মানুষজনের কপালে তিলক এঁকে দিচ্ছেন আঙুলের তিনটি রেখায়। তিলকের মধ্যে থাকছে মহাদেবের ত্রিশূল।

    গোবিন্দ দাস, সন্তোষ দাসরা তিলক এঁকে দিচ্ছেন অক্লেশে। এই স্থানীয় শিল্পীরা জানান, ৫–১০–২০ টাকা যে যেমন দেন, তাঁরা নিয়ে নিচ্ছেন। দৈনিক ২৫০–৩০০ টাকা উপার্জন হচ্ছে। বিহার–সহ আশপাশের এলাকা থেকে অনেক শিল্পী এসেছেন। বিনোদ ঠাকুর, সুরজ শর্মারা তিলক কাটতে বিভিন্ন ধর্মস্থানে ঘুরে বেড়ান। বলেন, ‘সবাই এখন নতুন ধরনের তিলক পছন্দ করছেন। বিশেষ করে কমবয়সিরা। আগের থেকে রোজগার বেড়েছে।’ এ বারই প্রথম নয়, দু’-তিন বছর ধরে এই তিলক কাটার রেওয়াজ শুরু হয়েছে জল্পেশে।

    তবে এ বারের মতো তা জনপ্রিয়তা পায়নি। মন্দিরে আসা পূর্ণিমা সরকার বলেন, ‘সিঁদুরের তিলক প্রতি বছরই কেটে দেয়। এ বারও দিয়েছে। সবাইকে দেখে আমিও লাল–হলুদ তিলক কেটেছি।’ অনেকেই তিলক আঁকিয়ে সেলফি তুলছেন। মুনমুন দাস নামে এক পুণ্যার্থীর কথায়, ‘নতুন ধরনের তিলক কেটে অন্যরকম লাগছে৷ লুকটাই যেন বদলে গিয়েছে।’ মন্দির কমিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দেবের বক্তব্য, ‘মন্দিরে পুজো দিতে আসা ভক্তদের কপালে চিরাচরিত রীতিতে তিলক কাটা হয়। এ বার অন্য ট্রেন্ড দেখছি। তবে সেটা মন্দির চত্বরে।’ উজ্জ্বল লাল–হলুদের আবেদন ফিকে হয় না। সেটা আরও একবার জানান দিয়ে গেল জল্পেশের নয়া এই ট্রেন্ড।

  • Link to this news (এই সময়)