• কাটেনি জটিলতা, পুজোর দাবিতে অনড় কাটোয়ার গিধগ্রাম
    এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৫
  • অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কাটোয়া

    ৩৫০ বছরের প্রাচীন মন্দিরে শিবের পুজোয় প্রবেশাধিকার নেই মুচি সম্প্রদায়ের। ‘নিচু’ জাতের তকমা লাগিয়ে দিয়ে মন্দিরে উঠতেই দেওয়া হয় না গিধগ্রামের দাসপাড়ার প্রায় একশোটি পরিবারের সদস্যদের। রাজধানী কলকাতা থেকে মাত্র ১৫৫–১৬০ কিমি দূরের এই গ্রামে এই ঘটনায় স্তম্ভিত সকলে।

    সোমবারও এই শিবমন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার মেলেনি দাসপাড়ার বাসিন্দাদের। মন্দিরের প্রাচীন রীতি আঁকড়ে ধরে ‘নিচু’ জাতের মানুষের পুজো দেওয়ার বিরোধিতা করে চলেছে গ্রামের এক বড় অংশের মানুষ। বার বার আলোচনার পরেও মিলছে না সমাধানসূত্র। যদিও প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দ্রুত এই বিতর্কের নিষ্পত্তি হবে।

    এ দিন কাটোয়ার এসডিপিও কাশীনাথ মিস্ত্রি বলেন, ‘আলোচনা চলছে। আশা করি, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’ মহকুমাশাসক অহিংসা জৈনের বক্তব্য, ‘মন্দিরে সকলে পুজো দেবেন, এটাই সিদ্ধান্ত। বাকি সমস্যাও দ্রুত মিটে যাবে।’

    গত কয়েকদিন ধরেই এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তপ্ত গিধগ্রাম। দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চিত এলাকার দাসপাড়ার মানুষেরা এ বার সমানাধিকারের লড়াইয়ে নেমেছেন। বাকিদের মতো মন্দিরে পুজো দিতে চান তাঁদের পরিবারের মেয়ে-বউরাও। গ্রামের তথাকথিত উচ্চবর্ণের লোকজন চাইছেন না, প্রথা ভেঙে মন্দিরে আসুন দাসেরা।

    গিধগ্রামে গিধেশ্বর শিবের নিত্যসেবা হয় সারা বছর। ধুমধাম করে শিবরাত্রি, গাজন উৎসব হলেও মন্দিরে প্রবেশাধিকার নেই মুচি সম্প্রদায়ের লোকেদের। শিবরাত্রির দিন দুয়েক আগে গিধগ্রামের দাসপাড়ার কিছু বাসিন্দা প্রশাসনের কাছে অভিযোগে জানান, স্রেফ মুচি হওয়ার কারণে মন্দিরে পুজো দিতে দাসপাড়ার শতাধিক পরিবারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মন্দিরে প্রবেশ করতে গেলে তাঁদের গালিগালাজ করা হচ্ছে।

    এর পরেই কাটোয়ার মহকুমাশাসকের উদ্যোগে ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়। ছিলেন কাটোয়া ও মঙ্গলকোটের দুই তৃণমূল বিধায়ক, কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, কাটোয়া–১ ব্লকের বিডিও, গিধেশ্বর মন্দির কমিটির কর্মকর্তা এবং দাসপাড়ার প্রতিনিধিরা। সিদ্ধান্ত হয়, গ্রামদেবতার পুজোর অধিকার গ্রামবাসী সমান ভাবেই পাবেন। দু’পক্ষ তাতে সম্মতিও দেয়।

    কিন্তু গত শুক্রবার ফের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। দাসপাড়ার কয়েকজন মন্দিরে পুজো দিতে গেলে ফের পথ আটকানো হয়। দাসপাড়ার বাসিন্দা এককড়ি দাসের অভিযোগ, ‘শিবমন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তালা খোলা হয়নি।’ আর এক গ্রামবাসী মদন দাসের মন্তব্য, ‘বৈঠকের পরেও অবস্থার বদল ঘটেনি। আমরা পুজো দিতে গেলে মন্দিরে উঠতে দেওয়া হয়নি।’ দু’পক্ষকে বুঝিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও পুজো না দিয়েই ফিরতে হয় দাসপাড়ার বাসিন্দাদের। রবিবারও একই ছবি দেখা গিয়েছে।

    এ ভাবে ক্রমাগত অপমানিত হয়ে ক্ষিপ্ত দাসপাড়ার বাসিন্দারা। এ দিন সেখানকার এক বাসিন্দা অশোক দাস বলেছেন, ‘প্রশাসন চেষ্টা করছে। বার বার করে ওঁদের নিয়ে বৈঠকও হচ্ছে, কিন্তু সমাধান তো মেলেনি। আমরাও পুজোর অধিকার চাই। এ দাবিতে আগের মতোই আমরা অনড়। শেষ দিন পর্যন্ত লড়ে যাব।’

    অন্য দিকে, মন্দিরের সেবায়েতরা আগেই একটি ‘মাস পিটিশন’ জমা দিয়েছেন প্রশাসনকে। সেখানে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, মন্দিরের রীতিনীতি ক্ষুণ্ণ হোক, তা কোনও অবস্থায় চান না। যদিও দাসপাড়ার বাসিন্দাদের পুজো দেওয়ার দাবি সুনিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষে।

  • Link to this news (এই সময়)