• ফরেন্সিকে গেল শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি, নয়া মামলা হাইকোর্টে
    এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: গত ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কাতেই কি আহত হয়েছেন ইরেজি স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়— এই প্রশ্নের জবাব পেতে এ বার মন্ত্রীর গাড়ির ফরেন্সিক পরীক্ষা করাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। ইন্দ্রানুজের শরীরে কোন কোন জায়গায় সে দিন আঘাত লেগেছিল, তা নিয়ে হাসপাতালের ডাক্তারদের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা সংগ্রহ করেছেন।

    ইন্দ্রানুজের বয়ানও নিয়েছে পুলিশ। মন্ত্রীর গাড়ির চালকের সঙ্গেও একপ্রস্ত কথা বলা হয়েছে। ওই দিনের দুর্ঘটনার আগে–পরের কিছু ভিডিয়ো ফুটেজও পুলিশ বিভিন্ন তরফের কাছ থেকে পেয়েছে। এ বার ওই গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করিয়ে পুলিশ সে দিন ঠিক কী ভাবে ওই ছাত্রটি জখম হলেন, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

    গত ১ মার্চ ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন ব্রাত্য। সেখানে পড়ুয়াদের একাংশের প্রতিবাদের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীরা এবং উপস্থিত ওয়েবকুপা ও টিএমসিপি সদস্যরা শিক্ষামন্ত্রীকে গাড়িতে তুলে বের করে দেওয়ার সময়ে তাঁর গাড়ির ধাক্কায় জখম হন ইন্দ্রানুজ।

    আবার ব্রাত্য ঘটনার পরে জানিয়েছিলেন, পড়ুয়াদের একাংশ গাড়িটির কাচ ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি বুঝে চালক গাড়িটি বের করার চেষ্টা করেন। সেই সময়ে গাড়ির বনেটে উঠে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পড়ে জখম হন এক পড়ুয়া। এই যাবতীয় ঘটনাপরম্পরা ফরেন্সিক পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

    এসএফআই ও ইন্দ্রানুজের পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন ব্রাত্য বসুর ব্যবহার করা গাড়ির ধাক্কাতেই গুরুতর আহত হন তিনি। এ দিন ফরেন্সিক পরীক্ষার বিষয়টি সামনে আসতে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, যে গাড়ি নিয়ে এত অভিযোগ উঠছে, সেই গাড়ি কি আদৌ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে? যদি বাজেয়াপ্ত করা হয়ে থাকে, তা হলে কবে হলো? কবেই বা তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে? গত কয়েকদিনে ওই গাড়ি ব্যবহার হয়নি তো?

    যদি হয়ে থাকে, তা হলে ফরেন্সিক পরীক্ষায় কি সঠিক তথ্য উঠে আসবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়া দেবার্ঘ্য যশ বলেন, ‘১ মার্চ থেকে আমরা দাবি করছিলাম, কর্তৃপক্ষ পুলিশে অভিযোগ করুন। এমনকী, ইন্দ্রানুজ রায়ের অভিযোগও পুলিশ নিতে চায়নি। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁর ই–মেলকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। আগেই গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হলে সত্যিটা সামনে আসার সম্ভাবনা আরও বাড়ত!’ সূত্রের খবর, গাড়ি ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ব্রাত্যকে জ়েড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। বদল করা হয়েছে তাঁর গাড়িটিও।

    যাদবপুরের তদন্ত এবং গাড়ির ফরেন্সিক পরীক্ষা নিয়ে সোমবার লালবাজারের কোনও কর্তা মুখ খুলতে চাননি। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’ প্রবীণ ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্ত বলেন, ‘দুর্ঘটনা বা এই ধরনের ঘটনায় কোনও গাড়ির যোগ থাকলে, দ্রুত তা বাজেয়াপ্ত করে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো উচিত। এর পর ওই গাড়িটি পরীক্ষা করে দেখা হবে, কোন কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই অংশের মাধ্যমে ওই পড়ুয়ার চোট–আঘাতের ধরন মিলিয়ে দেখা হবে। তাতেই প্রমাণিত হবে, ছাত্রের শরীরে গাড়ির চাকার আঘাত নাকি অন্য কিছুর চোট আছে। যাতে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট না হয়, সে কারণে গাড়িটি অফিশিয়ালি বাজেয়াপ্ত করা প্রয়োজন।’

    যাদবপুরের ঘটনায় আগামী ১২ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। এ দিকে যাদবপুরের ছাত্র–ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বার বার ডেকে পাঠানোর অভিযোগ তুলে এ দিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে নতুন মামলা দায়ের হয়েছে।

    মামলাকারীদের আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ মার্চ তাঁদের ডাকা হয়েছিল যাদবপুর থানায়। তাঁরা হাজিরাও দেন। অভিযোগ, সে দিন তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের মোবাইল চাওয়া হয়। তাঁরা আপত্তি করেন। তারপরে তাঁদের হেনস্থার চেষ্টা হচ্ছে।’ উদ্দীপন কুণ্ডু নামে এসএফআই সমর্থক এক ছাত্র হাইকোর্টে আবেদন করেন দ্রুত শুনানির জন্য। বিচারপতি ঘোষ আজ, মঙ্গলবার ফের ওই মামলা উত্থাপন করার নির্দেশ দেন আইনজীবীকে।

  • Link to this news (এই সময়)