সিবিআই, মুম্বই পুলিশের নামে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’, ৭০ লক্ষ ‘জরিমানা’ দিতে ৫০ লক্ষ ঋণ নিলেন ব্যবসায়ী!
প্রতিদিন | ১১ মার্চ ২০২৫
অর্ণব আইচ: সিবিআই আর মুম্বই পুলিশের নাম করে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’। ৭০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় ওই ব্যক্তিকে। জরিমানা মেটাতে শেষপর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিলেন ব্যবসায়ী। এমনকী, ডিজিটাল গ্রেপ্তারির জেরে টানা তিনদিন ধরে দরজা বন্ধ করে বসেও রইলেন ঘরে। যদিও ভুল ভাঙল কয়েকজন বন্ধুর পরামর্শে। এই ব্যাপারে সরশুনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ব্যবসায়ী। এবার ব্যবসায়ীর খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করার জন্য তৎপর পুলিশ আধিকারিকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, কিছুদিন আগেই সরশুনা এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীর কাছে একটি ফোন আসে। নিজেকে সিবিআই আধিকারিক পরিচয় দিয়ে তাঁকে এক ব্যক্তি জানায়, দিল্লি ও মুম্বইয়ের কয়েকটি ব্যাঙ্কে তাঁর নামে হিসাব বহির্ভূত লেনদেনের হদিশ মিলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই মামলা দায়ের করেছে। তাঁকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই ফোন আসার পর সরশুনার বাসিন্দাটি হতবাক হয়ে যান। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগে ফের আরও একটি ফোন আসে তাঁর মোবাইলে। কলে মুম্বই পুলিশের লোগো। এতে তিনি আরও ঘাবড়ে যান।
একজন নিজেকে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, তাঁর নামে একটি পার্সেল বিদেশ থেকে এসেছে। সেই পার্সেল খুলে দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মাদক। ওই ব্যবসায়ী যে মাদক পাচারকারী, তা প্রমাণিত হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাঁকে মুম্বইয়ে আসতে হবে। প্রথমে তিনি বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখতে বলা হয়। ব্যবসায়ী নিজের নামে পার্সেল আর তার ভিতর থেকে ‘উদ্ধার হওয়া’ মাদকের ছবিও দেখতে পান। তাঁকে বলা হয়, তিনি যদি মুম্বই না আসতে চান, তবে তাঁকে এখন অন্তত তিন দিন বাড়ির ভিতর গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন কিনা, তা তাঁর মোবাইলের টাওয়ারের মাধ্যমে নজর রাখা হবে। আপাতত তাঁকে জরিমানা দিতে হবে। তাঁর কাছ থেকে এক কোটি টাকা চাওয়া হয়। ব্যবসায়ী দরাদরি করা শুরু করলে তাঁকে বলা হয়, অন্তত ৭০ লাখ টাকা ‘জরিমানা’ তাঁকে দিতে হবে। না হলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি কয়েক দিন সময় চান। ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টে’র ভয়ে নিজেকে আটকে রেখে অনলাইনে ঋণের আবেদন করেন। নিজের জমানো ২০ লাখ টাকার সঙ্গে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ঋণ চান তিনি। ঋণ পেয়েও যান। সেই ৭০ লাখ টাকা ‘জরিমানা’ হিসাবে তিনি একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন।