কয়েকশো বছরের পুরোনো শিবমন্দির। সেই মন্দিরের সংস্কার করতে গিয়ে অবাক করা ঘটনার সাক্ষী থাকলেন গ্রামের বাসিন্দারা। মন্দিরের পিলারের জন্য যত দূর খনন করছেন, শুধুই শিবলিঙ্গ দেখা যাচ্ছে। এ ভাবে প্রায় ৬ ফুট খোঁড়ার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ওই জায়গায় আপাতত খোঁড়াখুঁড়ির কাজ হবে না। তাঁদের বিশ্বাস, এই শিব পাতালেশ্বর। তাই যত দূর খনন হবে, শুধুই শিবলিঙ্গই পাওয়া যাবে। সোমবার বীরভূমের নানুরের সাকুলিপুরে এই ঘটনা ঘটে।
সাকুলিপুরের এই মন্দির বহু প্রাচীন। সাকুলেশ্বর-পাতালেশ্বর-অনাদিলিঙ্গ বলে এই শিবের পরিচিতি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় এখানে তিলি সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতেন। সেই থেকে এই শিবের অবস্থান এখানে। সে সময় বিশাল মেলা বসত, পুজোপাঠ হতো নিয়ম করে। সেই প্রাচীন মন্দির এখন বয়সের ভারে ভাঙছে। তাই গ্রামের লোকেরা ঠিক করেন মন্দির সংস্কার করবেন। সম্প্রতি সেই কাজই শুরু হয়।
সাকুলিপুরের তিলি পরিবার কোনও এক অজ্ঞাত কারণে নানুর ও সাকুলিপুর ত্যাগ করলে এই সম্পত্তি চলে যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধীনে। এ বিষয়ে মুন্সি গোলাম গউসের দাবি, তাঁর পূর্ব পুরুষরা পারস্য থেকে এসে এখানে জায়গা কিনে থাকতে শুরু করেন। তাঁরাই সে সময় মন্দিরের চার দিকে পাঁচিলও দিয়ে দেন। মুন্সি গোলাম গউস জানান, এ গ্রাম সম্প্রীতির গ্রাম। হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে এ গ্রামে বাস করে। মন্দির নতুন করে তৈরি হবে, তাতে দারুণ খুশি তিনিও।
এ মন্দিরের সেবাইত সন্তোষ বটব্যালের কথায়, ‘আমার দাদু এখানে পুজো করতেন। এখন আমি পুজো করি। এখানে মন্দির তৈরির কাজ হচ্ছিল। সোমবার যত দূর মাটি খোঁড়া হলো, তত দূরই শিবলিঙ্গ দেখা গিয়েছে। আমরা শুনে এসেছি এখানে পাতালেশ্বর ভৈরবনাথ অনাদিলিঙ্গ। এখন তা বুঝতে পারছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা মানিকচন্দ্র কারক, কৌশিক রায়দের গলাতেও সেই বিশ্বাসের সুর। তাঁরা জানান, সাকুলেশ্বর অনাদি লিঙ্গের প্রমাণ মিলেছে। জনশ্রুতি, এই শিব পাতাল থেকে আবির্ভূত হয়েছেন। এই মন্দিরে শিবের অন্ত নেই। পিলারের কাজের জন্য ৫ ফুট খুঁড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইতিহাসবিদ এবং সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক পার্থশঙ্খ মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, ‘সাকুলিপুর অত্যন্ত পুরোনো একটি গ্রাম। যার আগে নাম ছিল কিসমত সাখলি পুর। ধর্মমঙ্গলের সঙ্গে এই জনপদের সম্পর্ক আছে। সেই হিসাবে শিবের পুজো এখানে বহু প্রাচীন। তবে যে ছবি সোমবার দেখা গিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে, প্রথমে যে শিব মন্দির ছিল, যে শিবলিঙ্গ ছিল, তার কিছুটা অংশ মাটির নীচে ছিল, কিছুটা মাটির উপরে। মন্দির পুনর্নির্মাণ হতে হতে কেবল শিবলিঙ্গের উপরের অংশটি প্রদর্শিত হচ্ছিল এত দিন। মাটি সরানোর ফলে সম্ভবত পুরোটা সামনে এসেছে। ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে আমার মত মাটির নীচে অংশ থেকে থাকলে, কোনও ভাবে তাতে হাত না দিয়ে পাশে মন্দির নির্মাণ করা যেতে পারে।’