সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
চেম্বারের সামনে চিকিৎসকদের নামের লম্বা তালিকা। আর তাঁদের নামের তলায় লেখা ‘পিজি, আরজি কর, এইমস বা কলকাতার বড় কোনও বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত’। শুধু তাই নয়, নামের সঙ্গে রয়েছে এমডি, ডিএমের মতো ডিগ্রির পাশাপাশি বিদেশি ডিগ্রির ছড়াছড়ি।
অনেকে হাতের কাছেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেলছেন। কিন্তু সোমবার কালনার বাঘনাপাড়ায় অপটোমেট্রিস্ট বলে নিজেকে দাবি করা এক মহিলা কালনা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চক্ষু বিশেষজ্ঞ সেজে চিকিৎসা করার ঘটনা সামনে আসায় দেখা দিয়েছে অস্বস্তি।
অনেকের মনেই উঠেছে প্রশ্ন, হাতের কাছে বড় ডাক্তার দেখানোর বিশ্বাসে কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে না তো? তবে চেম্বারে চেম্বারে বাইরে থেকে যে সমস্ত চিকিৎসকরা আসছেন, তা যাচাইয়ের দায় খানিকটা রোগীর উপরই ঠেলে দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, ‘নার্সিংহোম বা প্যাথলজি ল্যাবের লাইসেন্স সিএমওএইচ দেন। পিসিপিএনডিটি–র (ইউএসজি) মতো বিষয়ে লাইসেন্স দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য)। তবে চেম্বারে চেম্বারে চিকিৎসকদের যাচাইয়ের বিষয়টি সিএমওএইচের হাতে নেই। এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে কেউ প্রশাসনকে জানাতে পারেন। যে হেতু স্বাস্থ্যের বিষয়, তাই অভিযোগ পেলে আমরাও খতিয়ে দেখব। আর এখন ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিসিন কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ কোনও চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে যাচাই করে নিতে পারেন সেই চিকিৎসক আসল নাকি ভুয়ো।’
বাঘনাপাড়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন কালনা শহরের বাসিন্দা জগদীশ ঢালি। তাঁর কথায়, ‘আমরা গরিব মানুষ। লেখাপড়াও বিশেষ জানি না। কোনওরকমে সংসার চালিয়ে কষ্ট করে চিকিৎসককে দেখাচ্ছি এটাই জানি। বাঘনাপাড়ায় যা হলো তা হলে তো মুশকিল। আমরা ভুয়ো চিকিৎসক দেখাচ্ছি না তো তা হলে?’
তরুণ রায় নামের এক ব্যক্তির কথায়, ‘যিনি চেম্বার চালাচ্ছেন তাঁকেই চিকিৎসকের ব্যাপারে যাচাই করে নিতে হয়। তিনিই যদি জালিয়াতি করেন, তা হলে মানুষ তো ঠকবেই।’ কালনা শহরের ওষুধের দোকানে চিকিৎসকদের চেম্বার করে দেওয়া এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা সবকিছু দেখে নিই। কলকাতার চিকিৎসকদের অনেকের বাড়ি এইসব এলাকায়। তাঁরা এসে চেম্বার করেন।’
আইএএমের কালনা শাখার সভাপতি শেখ আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এখন ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের সাইটে গিয়ে রেজিস্টেশন নম্বর দিয়ে সার্চ করলেই কোনও চিকিৎসকের নাম, কবে এমবিবিএস বা এমডি করেছেন সব তথ্য পাওয়া যাবে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্দেশ আছে, প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ইমেল আইডি লেখা বাধ্যতামূলক। টেলিফোন নম্বরও লিখতে হবে। তবে অনেকেই এ সব লেখেন না। রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা যাতে প্রেসক্রিপশনে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সার্চ করলে চিকিৎসকের ছবিও পাওয়া যাবে।’
কালনার একটি নার্সিংহোমের ডিরেক্টর তথা শহরের অন্যতম সার্জেন আব্দুস সামাদের কথায়, ‘২০১৩ সালে একটা ঘটনা ঘটেছিল। হুগলির পাণ্ডুয়ায় আমার একটি নার্সিংহোমে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন। তাঁর কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তার পর থেকে তিনি আর আসেননি।’