অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
শাল-মহুলের জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়গ্রাম ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবর পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বিশেষ করে মাত্র আড়াই ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে সহজেই জঙ্গল-টিলা-নদী-ঝর্নার স্বাদ কলকাতার পর্যটকদের বরাবর আকৃষ্ট করে। তবে তারপর আপনি ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’-এর মতো কোনও একটা যাত্রীবাহী গাড়িতে উঠে পড়লেই যে কোনও একটি ইপ্সিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন, ব্যাপারটা কিন্তু একেবারেই নয়।
ঢাঙিকুসুম। বেলপাহাড়ি ব্লকের এই গ্রামে ২০১১ সালের আগেও যেতে পারত না পুলিশ প্রশাসন। পাহাড় টপকে যেতেন গ্রামবাসীরা। এতটাই দুর্গম যে ভোটের সময় হেলিকপ্টারে পৌঁছতে হত ভোটকর্মীদের। পাহাড়ের কোলে যেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে বসে রয়েছে এই ঢাঙিকুসুম। ঝাড়খণ্ড রাজ্য লাগোয়া এই ঢাঙিকুসুমের জলপ্রপাত এখন পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
কিন্তু হলে হবে কী?
অল্প খরচে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে বেলপাহাড়ি ৪০ কিলোমিটার। সেখান থেকে ওদলচোয়া ১০-১২ কিলোমিটার, সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার গেলে পড়বে ঢাঙিকুসুম। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি যাওয়ার বাস থাকলেও তার পর থেকে কোনও সরকারি যান পরিষেবা নেই। ফলে বেসরকারি গাড়িই ভরসা। স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করেই ঝাড়গ্রাম বা বেলপাহাড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে পর্যটকদের যেতে হয় ঘাঘরা, লালজলের আদিম গুহা, আমলাশোল, খান্দারানি জলাধার, গাড়রাসিনি পাহাড়, কেটকিঝর্ণা, ময়ূরঝর্ণা, ঝিল্লি পাখিরালয়, তপোবনের মতো আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে।
বেলপাহাড়ির বাসিন্দা গগন সিং, শ্যামল মিস্ত্রিরা বলেন, ‘ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য পাবলিক বাস আছে। কিন্তু সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে পর্যটনস্থল গুলিতে যাওয়ার জন্য পাবলিক বাস বা ছোট গাড়ি চলাচল তেমন নেই। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব গাড়ি ছাড়া কোন উপায় নেই।’
ফলে গাঁটের কড়ি ভালো রকম খরচ করেই যেতে হয় পর্যটকদের। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, ছোট গাড়িতে সারাদিনে ঝাড়গ্রাম ও আশপাশের বিভিন্ন জায়গা ঘোরানোর বিনিময়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকেন চালকেরা। তবে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, ওই ভাড়া হওয়ার কথা নয়. তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা স্বাভাবিক ভাড়া হওয়া উচিত। কিন্তু বেসরকারি গাড়ি ভাড়ার উপর ঝাড়গ্রামে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারি পরিবহণ পরিকাঠামো না থাকায় যে যেমন খুশি সুযোগ বুঝে ভাড়া হাঁকেন।
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিক অমিতকুমার দত্ত বলেন,‘জেলায় কিছু পর্যটনস্থল আছে যেখানে বাস ভেতরে ঢোকে না। আমরা বার বার মিটিংয়ে বলেছি কেউ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের লক্ষ্যে গাড়ি চালানোর আবেদন করলে সে ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু তেমন কোনও উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি না। অটো, ম্যাজিক গাড়ি বা ছোট গাড়ির মালিকেরা যদি ওই রুটগুলিতে গাড়ি চালাতে চান তা হলে কারও কাছে না গিয়ে সরাসরি জেলা পরিবহণ দপ্তরের অফিসে এসে আবেদন করুন। আমরা দ্রুততার সঙ্গে তাঁর গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেব।’