এই সময়, আসানসোল: স্থানীয়দের কেউ কেউ ভেবেছিলেন, ভুল করে বোধহয় ঢুকে পড়েছে হরিণ। অনেকে আবার শিকার করার লোভে তাকে ধাওয়া করতেও শুরু করে। পরে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণের পরে বোঝা গেল, লোকালয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি নীল গাই!
এমনই অভিনব দৃশ্য দেখা গিয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি থানার নিয়ামতপুরের ডেইডি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে। নিরীহ প্রাণী যাতে আক্রান্ত না-হয়, তার জন্য বন দপ্তরকে খবর দিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশে দাঁড়িয়েছেন পশুপ্রেমীরা। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বন আধিকারিকরাও।
রবিবার হঠাৎ করেই বনের ধারে নীল গাই-কে চোখে পড়ে গ্রামের লোকেদের। গোড়ায় সকলেই তাকে হরিণ বলে ভুল করে এবং শিকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু সন্ধে নেমে আসায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সোমবার সকাল থেকেই ফের শুরু হয়ে যায় তৎপরতা। অনেকেই ওই প্রাণীটিকে শিকার করার জন্য ওত পেতে বসেছিলেন। কিন্তু সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার একাংশের মানুষ সেই প্রাণীকে রক্ষা করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। মূলত তাঁদের উদ্যোগেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
খবর পেয়ে এলাকায় চলে আসেন বেশ কয়েকজন পশুপ্রেমী মানুষ। ‘ওয়াইল্ড টাস্কার্স’ সংগঠনের সদস্য সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘হরিণ ভেবে অনেকেই ভুল করেছিলেন, আসলে এটি নীল গাই। সচরাচর এই ধরনের প্রাণী আসানসোল, কুলটি, রানিগঞ্জ অঞ্চলে দেখা যায় না বলেই সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন। আমরা বন দপ্তরের কাছে অনুরোধ করেছি তাকে ধরে যথাস্থানে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, নীল গাই কী করে এই এলাকায় ঢুকে পড়ল? দুর্গাপুরের ডিএফএ অনুপম খানের ব্যাখ্যা, ‘এই ধরনের নীল গাই সাধারণত বিহার, ঝাড়খণ্ড অঞ্চলের বনে থাকে। মাঝেমধ্যে পুরুলিয়ার বেশ কিছি অঞ্চলেও এদের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। এই প্রাণীরা মূলত খেতের ফসল খেয়ে বেঁচে থাকে। আসানসোল বা রানিগঞ্জ অঞ্চলে সেই অর্থে তো খেত নেই। তাই হয়তো এই নীল গাই এখানে চলে এসেছে।’
তবে অনুপম এ-ও যোগ করেছেন, ‘ওই নীল গাই-কে না-ধরা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, কোন অঞ্চল থেকে তার আগমন হয়েছে। আমরা গ্রামবাসীদের বলেছি, প্রাণীটিকে নিজের মতো থাকতে দিতে। দ্রুত তাকে ধরে নিজের জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হবে।’
বন দপ্তরের জনৈক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘নীল গাইয়ের প্রজনন ক্ষমতা বেশি এবং মৃত্যুর হারও অন্য প্রাণীদের তুলনায় কম। বিহার, ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে এই ধরনের নীল গাই খেতের ফসল খুব নষ্ট করে বলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সুযোগে একটি চক্র এই প্রাণীগুলিকে ধরে বাইরে পাচার করার চেষ্টাও করে। সে ভাবেই এই নীল গাই এখানে এসেছে কি না, সেটাও আমাদের জানতে হবে।’