কৌশিক দে, মালদা
গ্রামে জনবসতি আছে। আছে স্কুল, হাটবাজার। কিন্তু যার উপর নির্ভর করে প্রতিটি মানুষ বেঁচে থাকেন, সেই পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই গ্রামে। কষ্ট যে কী হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুরাতন মালদা ব্লকের যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিয়ালপাড়া এমন একটি গ্রাম, যেখানে পরিস্রুত পানীয় জলের ভালো কোনও ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ।
পুকুর, ডোবার জলের উপরে নির্ভর করতে হয় শতাধিক গ্রামবাসীকে। যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অমল মুর্মু জানিয়েছেন, ছ’ মাস আগে এই গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জলাধার তৈরির জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। টেন্ডার করতে হবে তাই একটু সময় লাগছে। খানিকটা সুরাহা করতে কিছুদিন আগে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকরা সাবমার্সিবল পাম্প বসালেও কলের মুখ চুরি হয়ে যাওয়ায় আপাতত পানীয় জলের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিয়ালপাড়া এলাকায় বেশির ভাগ আদিবাসী মানুষের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় ৫০০। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা মৎস্যজীবী এবং দিনমজুরির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই শিয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের পরিশ্রুত পানীয় জল সংগ্রহ করতে গ্রাম থেকে অন্তত চার কিলোমিটার দূরে অন্য গ্রামে যেতে হয়। সেটা আবার সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না।
স্থানীয় গ্রামবাসী সুখেন মাহাতো, উত্তম মাহাতো বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঠিকমতো মিড–ডে মিল রান্না হতো না। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের বদ্ধ জলাশয় ব্যবহার করে অনেকেই চর্মরোগের শিকার হয়েছেন। পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য আমাদের অন্য গ্রামে যেতে হয়। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানালেও এখনও প্রয়োজনীয় কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গরমের সময়ে কী কষ্ট হয় বলার অপেক্ষা রাখে না।’
সমস্যা সমাধানে পঞ্চায়েত উদ্যোগ না–নিলেও এগিয়ে এসেছেন শিয়ালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শিক্ষক তথা সমাজকর্মী ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘আসলে পানীয় জলের অভাবে স্কুলের কচিকাঁচারা মিড ডে মিল নিয়মিত পাবে না, এটা কখনও বরদাস্ত করা যায় না। অনেক চিন্তাভাবনা করে গ্রামে সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর ব্যবস্থা করি। আমরা কয়েকজন শিক্ষক এবং আমাদের ব্যবসায়ী বন্ধুদের আর্থিক সাহায্য নিয়ে প্রায় দু’লক্ষ টাকা খরচ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর উদ্যোগ নিই।’
তবে এতেও সমস্যা মেটেনি। সাবমার্সিবল পাম্প চালাতে যে বিদ্যুতের বিল উঠবে, সেটা কে বহন করবে? সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ যাতে মেটান সে ব্যাপারে গ্রামবাসীরা গণস্বাক্ষর করে আবেদনপত্র পঞ্চায়েতে জমা দিয়েছেন। তবে কোনও সদুত্তর মেলেনি। উদ্বোধনের কয়েক দিনের মধ্যে ওই সাবমার্সিবল পাম্পের কলের মুখ চুরি হয়ে গিয়েছে। তার জন্য এখনও পানীয় জলের ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।
ভাস্কর বলেন, ‘আপাতত ঠিক হয়েছে যে গ্রামবাসীরা কিছু কিছু করে অর্থ সংগ্রহ করে বিদ্যুতের বিলের খরচ জোগাবেন।’ যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দলের প্রধান সজনী পাহাড়িয়া বলেন, ‘ওই এলাকায় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে নতুন সাবমার্সিবল পাম্প এবং পরিস্রুত জলাধার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’