• পানিহাটির পুরপ্রধানকে ফোনে ইস্তফার নির্দেশ ফিরহাদের, মাঠ ‘চুরি’-তে অভিযুক্ত মলয় বললেন...
    এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৫
  • পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায়কে ফোন করে ইস্তফা দিতে বললেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিধানসভায় পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষের ঘর থেকে সেখানকার পুরপ্রধানকে ফোন করেন তিনি। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন ফিরহাদ?

    পানিহাটি এলাকার অমরাবতী মাঠ বেআইনি ভাবে বিক্রির অভিযোগ ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, পানিহাটির ফুসফুস বলে পরিচিত প্রায় ৮৫ বিঘার ওই মাঠ কোনও প্রোমোটার গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তবে কি শাসক দলের অঙ্গুলিহেলন রয়েছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা উঠেছে।

    অভিযোগ, সম্প্রতি অমরাবতী মাঠের একাংশ বহুতল আবাসন প্রকল্পের জন্য বিক্রির চেষ্টা হয়েছিল। ওই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলেন। মুখ্যসচিব জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিলেন। জেলা প্রশাসনের দেওয়া রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন মনোজ পন্থ। তার পরেই মলয়কে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর।

    তাঁকে দেওয়ার ইস্তফার নির্দেশ প্রসঙ্গে মলয় রায় বলেন, ‘আমার কাছে ফিরহাদ হাকিম ফোন করে পদত্যাগের অনুরোধ করেছেন। আমি ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি ভেবে দেখছি। আমি দলের একনিষ্ঠ কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী এবং পুরমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছি পদত্যাগের কারণ কী। আমি শুধুমাত্র আমার অপরাধটুকু জানতে চাই।’

    বড় রাজনৈতিক সভা থেকে শুরু করে খেলা কিংবা উৎসবের আয়োজন হয় সোদপুরের এই অমরাবতী মাঠে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিংবা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাবড় রাজনীতিবিদ এই মাঠে সভা করেছেন বিভিন্ন সময়ে। সোদপুর–পানিহাটির বাসিন্দা অথচ অমরাবতী মাঠের সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে নেই এমন মানুষ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমন মাঠ নাকি বাণিজ্যিক স্বার্থে প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউই।

    ওই জমির মালিকানা রয়েছে সোস্যাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ইন ইন্ডিয়ার নামে। আটের দশকে তৎকালীন বাম সরকার জমিটিকে অব্যবহৃত হিসেবে চিহ্নিত করে তার কিছু অংশে স্পোর্টস কমপ্লেক্স করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু জমির মালিক পক্ষ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালতে মালিক পক্ষ মানবপ্রেমী, অলাভজনক এবং অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করায় হাইকোর্ট জানিয়ে দেয় বাণিজ্যিক স্বার্থে সেখানে কিছু করা যাবে না। যদি বাণিজ্যিক বা লাভজনক উদ্দেশ্যে ওই জমির কোনও অংশ ব্যবহৃত হয়, তবে সরকার ওই জমি আবার অধিগ্রহণের নোটিস জারি করতে পারবে। মাঠ বিক্রির খবরে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে তাদের প্রশ্ন, শাসক দলের স্থানীয় কোনও প্রভাবশালীর মদত ছাড়া এ কাজ সম্ভব? 

    তথ্য সহায়তায়: মণিপুষ্পক সেনগুপ্ত, অশীন বিশ্বাস

  • Link to this news (এই সময়)