সোমনাথ মাইতি, কাঁথি
কয়েকশো বছর আগেও প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁথি বা দিঘা উপকূল ছিল সমুদ্রের গর্ভে। সমুদ্রে পলি জমে ধীরে ধীরে বর্তমান উপকূল এলাকা গড়ে উঠেছে। অভিযোগ, তারপর থেকেই হোটেল, শিল্প, কৃষি ও অন্য কাজের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার হচ্ছে। হোটেলগুলো পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নিচ্ছে। মিষ্টি জলে মিশছে নোনা জল। রয়েছে চিংড়ির ভেড়িও।
এর জেরে বিপদ বাড়ছে উপকূল এলাকায়— গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এল বিজ্ঞানীদের হাতে। গবেষক ও পরিবশবিদদের আশঙ্কা, ভূগর্ভস্থ জলের দেদার ব্যবহারের ফলে ১৫-২০ বছরের মধ্যে উপকূল এলাকা জুড়ে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
বিস্তীর্ণ এলাকা ব্ল্যাকজ়োন তালিকাভুক্ত। অথচ ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিদিন মাটির নীচ থেকে গ্যালন গ্যালন জল তোলা হচ্ছে
প্রীতিরঞ্জন মাইতি, গবেষক
গবেষকদের মতে, ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ায় মিষ্টি জলের জলস্তর কমতে শুরু করছে। সমুদ্র থাকায় মিষ্টি জলের জায়গায় ঢুকে পড়ছে নোনা জল। এর ফলে ভবিষ্যতে আর মিষ্টি জল পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া উপকূল জুড়ে গজিয়ে উঠেছে চিংড়ির ভেড়ি। নোনা জলে চাষ হয় চিংড়ির। চিংড়ি চাষে দেদার রাসায়নিক মিশ্রিত ওষুধ ও খাবার ব্যবহারের ফলে চাষের মাটিও বিষাক্ত হয়ে পড়ছে।
পারদ ও সিসার মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহারে ভেড়ি সংলগ্ন এলাকার আনাজ ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে শুধু কাঁথি উপকূল এলাকা নয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ জলস্তর লবণাক্ত হয়ে পড়বে। আর্সেনিকের পরিমাণও বাড়বে বলে জানান গবেষকরা।
উপকূল এলাকার ভেড়ি চাষ ও তার প্রভাব নিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গবেষণা করেছেন প্রীতিরঞ্জন মাইতি। তিনি রামনগরের হরিপুর দশগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। পরিবেশ নিয়ে তাঁর কাজের জন্য ২০১৪ সালে রাজ্য জীব বৈচিত্র্য পর্ষদের পুরস্কার পেয়েছেন। প্রীতিরঞ্জন বলেন, ‘শুধু উপকূল এলাকা নয় কাঁথি ও এগরা মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ব্ল্যাকজ়োন তালিকাভুক্ত। অথচ ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। চাষের কাজ ও হোটেলের প্রয়োজনে প্রতিদিন মাটির নীচ থেকে গ্যালন গ্যালন জল তোলা হচ্ছে।’
তাঁর সংযোজন, ‘চিংড়ি চাষের জন্য আরও ক্ষতি হচ্ছে। যে রাসায়নিক চিংড়ির খাবার ও ওষুধের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা ভূর্গভস্থ জলে মিশছে। এমনকী নদী ও খালের জলেও বিপদ আছে। ওই জলেও ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে।’
তিনি জানান, দিঘা থেকে খেজুরি পর্যন্ত উপকূলজুড়ে বালিয়াড়ির গাছপালা কেটে একের পর এক মাছের ভেড়ি গজিয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে চলছে ভূগর্ভস্থ জলের যথেচ্ছ ব্যবহার। ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার প্রসঙ্গে উপকূলবর্তী রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার বলেন, ‘আমরা হোটেল তৈরির অনুমতি দিয়ে থাকি। ভূগর্ভস্থ জল তোলার কোনও অনুমতি দিই না।’