• হিমোগ্লোবিন নেমে ছয়ের নীচে, মনের জোরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা জয়ন্তের
    এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

    রোগ প্রথম ধরা পড়েছিল ২০১৫ সালে। তার পর থেকে মাসে এক বা দু’বার তাকে আসতে হয় জেলা হাসপাতালে রক্ত নিতে। জামুড়িয়ার সত্তর হাইস্কুলের পড়ুয়া জয়ন্ত মাজি আক্রান্ত থ্যালাসেমিয়ায়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা হার মেনেছে তার মানসিক দৃঢ়তার কাছে। সোমবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে জয়ন্ত। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের অনুমতি নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দিয়েছে লড়াকু ওই ছাত্র। যার মনোবলকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে।

    বোরিংডাঙা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ দিন পরীক্ষা দিতে আসে জয়ন্ত। ছিল ফিলোজ়ফি বিষয়ের পরীক্ষা। হঠাৎ অসুস্থবোধ করতে থাকে এই পরীক্ষার্থী। দ্রুততার সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা হাসপাতালে। পরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অনুমতি নিয়ে হাসপাতালের একটি কেবিনে বসে পরীক্ষা দেয় জয়ন্ত। শুধু তাই নয়, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে সেই হাসপাতালেই নতুন করে আবার রক্তগ্রহণ করতে হয় তাকে। মঙ্গলবার ফের পরীক্ষা রয়েছে। ফের যাতে এ ধরনের বিভ্রাটের মধ্যে পড়তে না হয়, তার জন্যই এই সাবধানতা অবলম্বন।

    জয়ন্তর বাবা আশিস মাজির ছোটখাটো একটি দোকান রয়েছে। কোনওক্রমে চলে সংসার। কিন্তু ছেলে যাতে পড়াশোনা করতে পারে, তার জন্য সমস্ত ধরনের চেষ্টাই করে চলেছেন বাবা। এ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে জয়ন্ত হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়েই সেখানে পৌঁছে যান জামুড়িয়া বরো ১-য়ের চেয়ারম্যান শেখ সান্দার। তিনিই দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন। প্রথমে জামুড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার পরে জানা যায়, সেই পরীক্ষার্থীর হিমোগ্লোবিন ৬-এর নীচে নেমে গিয়েছে। ফলে তাকে দ্রুত স্থানান্তরিত করা হয় জেলা হাসপাতালে।

    চিকিৎসক সোমনাথ গুপ্ত ভালো করে পরীক্ষা করেন জয়ন্তকে। সেই সময়েই জয়ন্ত পরীক্ষা দেবে বলে জানায়। তার জন্য আলাদা কেবিনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। বিকেলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে আবার তাকে রক্ত দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে জয়ন্ত সুস্থ রয়েছে। জেলা উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের আহ্বায়ক সব্যসাচী সেন বলেছেন, ‘জয়ন্তের মনের জোর দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। ও যাতে সুস্থ ভাবে বাকি পরীক্ষাগুলি দিতে পারে, তার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হবে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি জামুড়িয়া বরো ১-এর চেয়ারম্যান এবং স্কুলের দুই শিক্ষক রামপ্রকাশ ভট্টাচার্য এবং প্রতিভানাথ রায়-কে। ওঁদের তৎপরতার জন্যই জয়ন্ত পরীক্ষা দিতে পেরেছে।’

    হাসপাতালে জয়ন্তের সঙ্গে ছিলেন তার জামাইবাবু দয়াময় মণ্ডল। তিনি পরে বলেন, ‘২০১৫ সালে প্রথম থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে ওর। তার পর থেকে জেলা হাসপাতালে মাসে এক থেকে দু’বার আসতেই হয় রক্ত নেওয়ার জন্য। কোনও সময়ে জেলা হাসপাতালেও যেতে হয়। আর্থিক ভাবে এই পরিবার খুব বেশি শক্তিশালী নয়। তবে তার মধ্যেই জয়ন্ত মনের জোরে এগিয়ে চলেছে।’ তিনি আরও জানান, যে ভাবে সকলে জয়ন্তকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন, তার জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন।

  • Link to this news (এই সময়)