সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার
নদী বয়ে গিয়েছে তার নিজের গতিতে। তাতে বাঁধ দিয়েছে মানুষ। কখনও জলের স্রোতে টগবগ করছে নদীখাত। কখনও বা বাধা পেয়ে জল পিছিয়ে যাচ্ছে চরের বালি ফেলে রেখে। সেই চরে ফূর্তিতে মাতছেন কিছু মানুষ। কেউ বসে খাওয়াদাওয়া করছেন, কেউ তুলছেন সেলফি। কারও আবার ঝোঁক রিলস তৈরিতে। যে কোনও সময় জল এসে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে এ সব কিছু, তার তোয়াক্কা নেই যেন কারও!
তিস্তায় নতুন চর পড়েছে। দু’পাশে পাহাড়ের খাদ বেয়ে সাদা বেলাভূমির মতো সেই চর যেন সমুদ্র সৈকতের মিনিয়েচার। নতুন আবিষ্কারের নেশায় ব্লগাররা নেমে পড়েছেন সেখানে। মুহূর্তেই ভিডিয়ো ভাইরাল। বাইক নিয়ে ছুটছে টিনস টুইনস। আর এতেই প্রমাদ গুনছেন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আধিকারিকরা। পাহাড়ি তিস্তার সিকিম থেকে কালিম্পং পর্যন্ত অনেকগুলি বাঁধ। জলস্তর বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মে জল ছাড়া ও আটকে রাখা হয়।
নদীর উপরে বাঁধের নির্মাণ তিস্তার স্বাভাবিক ছন্দে অনেকটাই লাগাম পরিয়েছে। সে কারণেই স্রোতের কম বেশি হওয়ায় নতুন নতুন চর পড়েছে পাহাড়ি তিস্তায়। কিন্তু এ সব চরের জলের নীচে চলে যেতে সময় লাগে না বিশেষ। সিকিমের জাতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (তিস্তা)–র বিভাগীয় আধিকারিক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত সতর্কীকরণ বোর্ড লাগিয়েছি। জল ছাড়ার এক বা আধঘণ্টা আগে থেকে তীব্র সাইরেন বাজানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কে, কোথায় ক্যামেরা নিয়ে নদীর চরে নেমেছেন, সেটা দেখার পরিকাঠামো আমাদের কাছে নেই।’
তিস্তা শুধু একমাত্র উদাহরণ নয়। এ অভিজ্ঞতা জলঢাকা, ডায়ানা সব নদীরই। একইসঙ্গে নদীর বুকে তৈরি হচ্ছে ছোট ঘর। গজিয়ে উঠছে পিকনিক স্পট। রেস্তোরাঁ ও রাত্রিবাসের কটেজ মাথা তোলে। উত্তরের পরিবেশপ্রেমী শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে বলেন, ‘নদীর বুকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা আসলে প্রকৃতির ক্ষতি করা। একইসঙ্গে নিজেরও বিপদ ডেকে আনা।’
কালিম্পংয়ের শ্রীহরি পান্ডে বলেন, ‘আমরা ব্লগারদের লুপ সেতু থেকে সরিয়ে ফেলতে সফল হয়েছি। তিস্তার উপর যদি কেউ নামেন, সে ক্ষেত্রেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উত্তরের পাহাড়–ডুয়ার্সে এমন 'ভার্জিন স্পট' অনেক আছে। এ সব জায়গায় এখনও মানুষের পা পড়েনি। কখনও ড্রোন উড়িয়েও শ্যুট করছেন ব্লগাররা। উত্তরের চারদিকে সেনা শিবির। তার ধারপাশে ‘নো ড্রোন জ়োন’। তা সত্ত্বেও উড়ছে ড্রোন। ব্লগারদের একাংশ অফবিট, সুন্দর, রহস্যে–ঘেরা এলাকার প্রচারের পক্ষে। বিরুদ্ধ মতও আছে। ব্লগার বিপ্লব মণ্ডল নদিয়ার করিমপুরের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘যে এলাকায় যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আছে, ব্লগে সেই এলাকার প্রচার করা উচিত নয়।’