• দরবার দিল্লিতে, তাপসী বিজেপি ছাড়তেই সক্রিয় শুভেন্দু বিরোধী গোষ্ঠী
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১১ মার্চ ২০২৫
  • একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় প্রচারে এসে মোদী-শাহ-নাড্ডারা দু’শো পারের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু ফলাফল বেরোনো পর দেখা যায়, ২০০ তো দূর, ৭৭-এই থেমে গিয়েছে বিজেপির দৌড়। গেরুয়া শিবিরে অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, একুশের ভোটে রাজ্যের শয়ে শয়ে কেন্দ্রে শুভেন্দু অধিকারীর ঠিক করে দেওয়া নেতাদের টিকিট দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু তাঁরা কেউই নিজেদের কেন্দ্রে পদ্ম ফোটাতে পারেননি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরে ভরাডুবি হয়েছিল বাংলায়। সেই সময় থেকে বিজেপির অন্দরে শুভেন্দুর নেতৃত্ব নিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এরই মধ্যে সোমবার হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। স্বভাবতই, আপাতত বেশ চাপে পড়ে গেলেন বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তাপসীর দলত্যাগ নিয়ে বিজেপির অন্দরে গোষ্ঠী রাজনীতি তুঙ্গে উঠেছে। সোমবার বিকেল থেকেই শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের তৎপরতা জোরদার হয়ে উঠেছে।

    সূত্রের খবর, শুভেন্দু বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই দিল্লির নেতাদের কাছে শুভেন্দু বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে সোমবার রাতে ই-মেল করেছেন দলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতি সামসুর রহমান। তিনি লিখেছেন, একের পর এক বিজেপি বিধায়ক দল ছাড়ছেন। তাঁদের ধরে রাখতে পারছেন না বিরোধী দলনেতা। শুধু সামসুর নন, শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের অনেকেই দিল্লির নেতৃত্বে কাছে নন্দীগ্রামের বিধায়কের নামে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, নিজের খাসতালুক পূর্ব মেদিনীপুরের দলের ভাঙন ঠেকাতে পারছেন না শুভেন্দু। অন্য জেলার পরিস্থিতি তাহলে সহজেই অনুমেয়। যদিও সংবাদমাধ্যমের সামনে তাপসীর দল ছাড়াকে গুরুত্ব দিতে চাননি বিরোধী দলনেতা।

    প্রসঙ্গত, তাপসীকে বিজেপিতে নিয়ে এসেছিলেন শুভেন্দুই। শুধু তাই নয়, দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদেও তাপসীকে বসিয়েছিলেন তিনিই। বিজেপির অন্দরে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই তাপসী মণ্ডলের আচমকা দলত্যাগে হতচকিত গেরুয়া শিবির। যদিও এই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া শুভেন্দু বিরোধী শিবির। সেই শিবিরের নেতারা ইতিমধ্যেই দিল্লির নেতাদের কানে দিতে শুরু করেছেন, শুভেন্দু অধিকারী দলীয় বিধায়কদের ধরে রাখতে পারছেন না। ৭৭ থেকে কমে ৬৫ হয়েছে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা। আরও কয়েকজন বিধায়ক নাকি তৃণমূলের দিকে এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন। ফলে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রীতিমতো চিন্তিত বঙ্গ বিজেপির নেতারা। তাপসী দলত্যাগ নিয়ে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও নীরব থাকলেও দিল্লির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা খোঁজখবর নিয়েছেন।

    খুব শীঘ্রই বঙ্গ বিজেপির নয়া সভাপতির নাম ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই পদে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ কাউকে বসানো হবে নাকি দলের অন্য শিবিরের কোনও নেতাকে সভাপতি করা হবে, সেটাই এখন দেখার। রাজ্য সভাপতির তালিকায় দিলীপ ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্যর পাশাপাশি খোদ শুভেন্দু অধিকারীর নামও রয়েছে। আবার কয়েকজন মহিলা নেত্রীর নাম নিয়েও আলোচনা চলছে বলে খবর। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে দলের এই ভাঙন নিয়ে কার্যত বিরক্ত দিল্লির নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত বঙ্গ বিজেপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে। সেখানে শুভেন্দু অধিকারীও হাজির থাকতে পারেন জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)