তৃণমূলের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ ভাঙন শুভেন্দু গড়ে, ছাব্বিশের আগে পদ্মবনে কাঁটা আর কারা?
প্রতিদিন | ১১ মার্চ ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: ছাব্বিশের আগে তৃণমূলের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ ভাঙন ধরেছে শুভেন্দু গড়ে। তবে একা তাপসী মণ্ডল নয়, ভোটের আগে বঙ্গ বিজেপির চিন্তা বাড়াচ্ছে আরও অন্তত ৫-৭ জন বিধায়ক, এমনই খবর গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। যাঁরা নাকি তৃণমূলের দিকে এক পা বাড়িয়েই রেখেছেন, ফুল বদল করতে পারেন যে কোনওদিন! বঙ্গ বিজেপির এমন পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। দ্রুত তারা বৈঠকে বসতে চলেছে বলেও খবর।
বিজেপির চিন্তা বাড়িয়েছে শক্ত ঘাঁটি উত্তর! অনেকদিন ধরেই কার্শিয়াঙের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ‘বেসুরো’। পাহাড়কে ‘পৃথক রাজ্য’ করার দাবিতে সরব হয়েছেন তিনি। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় দলের অন্দরেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। দাবিপূরণ না হওয়ায় আগামী বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন বিষ্ণুপ্রসাদ। ইতিমধ্যে দল ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন কার্শিয়াঙের বিধায়ক। তিনি যে এখনই ফুল বদল করবেন না, তা জোর দিয়ে বলতে পারছে না বিজেপি নেতৃত্ব।
একা বিষ্ণুপ্রসাদ নন, দলবদলের আবহে বিজেপির গলার কাঁটা উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজের একান্ত অনুগত হিসেবেই এলাকায় পরিচিত তিনি। একুশের ভোটে জেতার পরও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সৌমেন। গেরুয়া শিবির অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পর চব্বিশের লোকসভার আগে বিজেপিতে ফিরে আসেন সৌমেন। তবে গত কিছুদিন ধরেই ‘বিজেপি বিরোধী’ সুর অনন্ত মহারাজের গলায়। এমন অবস্থায় তাঁর ‘অনুগত সৈনিক’ সৌমেনও যে দলবদল করবেন না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না রাজনৈতিক মহল।
এই তালিকায় নাম রয়েছে গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলাতে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে ‘ক্ষুব্ধ’ তিনি। প্রকাশ্যে মুখও খুলেছেন। সেই ক্ষোভের আঁচে সত্যেন দলবদল করে ফেলবেন না তো, উঠছে প্রশ্ন। ধন্দের তালিকায় রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের জন বার্লা ঘনিষ্ঠ বিধায়করাও। শুধু উত্তর নয়, জঙ্গলমহল-রাঢ়বঙ্গের কিছু বিধায়কের গতিবিধিও চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজেপির। এমনকী, মতুয়াগড়েও ভাঙনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
শুভেন্দু গড়ে তৃণমূলের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র পর থেকেই চিন্তায় বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, একে দলীয় সংগঠনের তথৈবচ হাল। উপরন্তু রয়েছে গোষ্ঠীকোন্দলের কাঁটা। তার মধ্যে দলের এই ভাঙন নিয়ে কার্যত বিরক্ত দিল্লির নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে। সেখানে শুভেন্দু অধিকারীও হাজির থাকতে পারেন বলে সূত্রের দাবি।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা দু’শো পারের ডাক দিলেও একুশের বিধানসভা ভোটে মাত্র ৭৭-এ থামতে হয়েছিল শুভেন্দু-সুকান্তদের। তবে এই ‘সম্বল’ও ধরে রাখতে পারেননি তাঁরা। প্রথমেই হাতছাড়া হয়েছিল ২টি আসন। কারণ, সাংসদ থাকাকালীন বিধায়ক হওয়ার দৌড়ে নাম লিখিয়েছিলেন নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। দু’জনেই জিতেছিলেন বিধায়ক পদে। কিন্তু পরে ইস্তফা দিয়ে সাংসদ পদেই ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। ফলে ফলপ্রকাশের পরই বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৭৫। তারপর ফুলবদল করে আরও ৮ জন। সবমিলিয়ে গেরুয়া শিবিরের বিধায়ক সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৬৫। ছাব্বিশের আগে তৃণমূলের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চলতে থাকলে বঙ্গ বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার। স্বাভাবিকভাবে বিধায়কের সংখ্যা কমতে থাকলে ভোটের আগে জেলায়-জেলায় বিজেপির সংগঠনও যে তলানিতে গিয়ে ঠেকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে ছাব্বিশের ভোটবাক্সে।