ঘুঙুর পরে নাচ-গানে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার ‘গোলাপ সুন্দরী’র, অভিনব উদ্যোগ শিক্ষকের
প্রতিদিন | ১১ মার্চ ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার, ঘাটাল: পায়ে ঘুঙুর। পরনে গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা। ফুলহাতা সোয়েটার। সেটিও গোলাপি রঙের। দু’গালে গোলাপি রঙের দাগ টানা। লোকে তাঁকে চেনে ‘গোলাপ সুন্দরী’ নামে। ঘুঙুর পরা পায়ে নেচে নেচে গান গেয়ে বেড়ান তিনি। মূলত তাঁর গানের ভাষা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে। ছন্দে তালে মিলিয়ে তাঁর এই নাচ দেখতে ভিড় জমান আট থেকে আশি সকলে। প্রতি রবিবার তো বটে, অন্য ছুটির দিন হলেই বহুরূপী সেজে বেরিয়ে পড়েন। ঘুঙুর পরা পায়ে ‘গোলাপ সুন্দরী’ নেচে নেচে গেয়ে বেড়ান, “১৮ বছর আগে মেয়েদের বিয়ে দেবে না, মা-বাবা হয়ে তাদের বিপদে ফেলো না। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়ে পড়বে রোগে, তোমাদেরই কষ্ট হবে মেয়ে যদি ভোগে।”
শনিবার হুগলির খানাকুল থেকে হেঁটে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সোজা পৌঁছে গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে শুধু এই বিদ্যাসাগরের গ্রামে নয়, তিনি হেঁটে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিউ দিল্লির পার্লামেন্ট হাউসেও। এমনকী, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যাতেও পৌঁছে গিয়েছিলেন বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার নিয়ে। পৌঁছে গিয়েছিলেন পাহাড় ঘেরা দার্জিলিং শহরেও। বাল্যবিবাহ আর শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করে চলেছেন ‘গোলাপ সুন্দরী’। আসলে তাঁর প্রকৃত নাম দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক দেবাশিসবাবুর বাড়ি হুগলি জেলার খানাকুল থানার মাজিপুর গ্রামে। মাজিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি মানুষকে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে বহুরূপী সেজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান তিনি। তার জন্য শিক্ষা দপ্তর থেকে লম্বা ছুটি নিয়েছিলেন দেবাশিসবাবু।
হাতে একটি ফ্লেক্স। তাতে লেখা ‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করুন’, শিশু নির্যাতন বন্ধ করুন’। গত শনিবার বহুরূপী সেজে হুগলির রাধানগর গ্রাম যেখানে রামমোহন রায়ের জন্মস্থান সেখান থেকে হেঁটে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থানে। বিদ্যাসাগরের জন্মস্থানে দাঁড়িয়ে ঘুঙুর পরা পায়ে নেচে নেচে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার করেন। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস।
দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমি মনে করি একজন শিক্ষকের কাজ শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে শিক্ষাদান করা নয়, সমাজের মানুষকে সচেতন করে তোলাও একটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিদ্যাসাগর মহাশয় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। তিনিও কিন্তু একজন শিক্ষক ছিলেন। আমি সেই মহান মানুষটির দেখানো পথে হাঁটছি। আমি এই বার্তা নিয়ে দিল্লি, অযোধ্যা, পাটনা, কলকাতা, শৈলশহর দার্জিলিংও গিয়েছি এই বহুরূপী সেজে। সব জায়গাতেই বহু মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি। প্রশাসনের কাছ থেকেও দারুন সহযোগিতা পেয়েছি।’’ দেবাশিসবাবুর ভূমিকার প্রশংসা করে সুমনবাবু বলেন, সমাজে এখনও এমন মানুষ আছেন বলেই তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি। তিনি কিন্তু সমাজেরও যথার্থ শিক্ষক হয়ে উঠেছেন।