রণজয় সিংহ: ঘাস পেঁচা। নাম শুনেছেন? নিশ্চয় না। পাখি প্রেমীরা শুনে থাকতে পারেন। প্রায় ৪৫ বছর পর বাংলায় পাওয়া গেল এই ঘাস পেঁচার সন্ধান। তাও আবার মালদহে। গঙ্গার বুকে গজিয়ে ওঠা চরে মালদহ জেলা বনদপ্তরের পক্ষ থেকে পাখি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সেই সময় বন দপ্তরের কর্মীদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই বিরল প্রজাতির পেঁচা।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় ঘাস পেঁচা বা অস্ট্রেলিয়ান গ্রাস আউল। ঘাস পেঁচা বা অস্ট্রেলেলিয়ান গ্রাস আউল অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া মহাদেশের সাধারণত দেখা যায়। ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বর্তমানে এই পাখি দেখা গেলেও পশ্চিমবঙ্গে তেমনভাবে এই পাখির খোঁজ মেলেনি এতদিন। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮০ সালে শান্তিনিকেতনে শেষবার এই পাখি দেখা গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। এছাড়াও জার্নাল অফ দ্য বোম্বে ন্যাচারাল স্টোরি সোসাইটি তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে ১৯২০ সালে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় এই পাখি দেখা গিয়েছিল। তবে সেই সময়কার কোন ছবি কোথাও বর্তমানে নেই।
১৯৮০ সালের পর ২০২৫ সালের ৯ মার্চ এই পাখির আবার দেখা মিলল মালদা জেলার গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে। প্রতিবছর বন দপ্তর পরিযায়ী পাখির সমীক্ষা করে থাকে গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে। কাঁটাহাদিয়ারা থেকে ফারাক্কা ব্যারেজ পর্যন্ত গঙ্গা নদীর তীর ধরে এই সমীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই বছর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এই সমীক্ষা চালাচ্ছিল মালদা বন দপ্তর। ৯ মার্চ প্রথম এই পেঁচার ছবি ধরা পড়ে। ১১ মার্চ পুনরায় সেই এলাকায় গিয়ে আরো দুইটি ঘাস পেঁচার ছবি তুলতে সক্ষম হন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা তথা পক্ষী বিশেষজ্ঞ শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ৪৫ বছর পর এই পাখি দেখা গেল। বন দপ্তর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলে এই পাখিটি যেন সংরক্ষণ করে রাখা যায় সেই ব্যবস্থা করার আবেদন জানাবো।
সাধারণত এই প্রজাতির পেঁচা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণত এই ঘাস পেঁচা তৃণভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। অন্যান্য প্রজাতির পেঁচা যেমন লোকালয়ে দেখা যায়। কিন্তু এই পেঁচা দেখা যায় ঘাস জমি এলাকাতেই। মালদায় এ পাখির খোঁজ মেলায় খুশি জেলার পক্ষীপ্রেমীরা। এই পাখিটিকে যেন সংরক্ষণের ব্যবস্থা দূরত্ব প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয় সেই আবেদন জানাচ্ছেন জেলার পক্ষী প্রেমীরা। জেলা বনদপ্তরের আধিকারিক (ডিএফও)জিজু জেসফার জি জানান মালদহের গঙ্গা তীরবর্তী কালিয়াচক ২নং ব্লকের পঞ্চানন্দপুর অঞ্চলের আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। সেই উড়ন্ত পেঁচার ছবি ক্যামেরা বন্দি হয়েছে। সেই ছবি পক্ষী বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বন দপ্তরের পক্ষ থেকে এই পাখির সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।