কাটোয়ার মন্দিরে পুজোর অধিকার পেল দাস সম্প্রদায়, এসেছে মুক্ত হাওয়া!
হিন্দুস্তান টাইমস | ১২ মার্চ ২০২৫
কাটোয়ার গীধগ্রামের গীধেশ্বরী মন্দির। সম্প্রতি চর্চায় উঠে এসেছিল এই মন্দিরের কথা। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাতেও এনিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। আসলে এই মন্দিরে দাস সম্প্রদায় গর্ভগৃহে প্রবেশের অধিকার চেয়েছিল। নীচু জাতের দোহাই দিয়ে এতদিন তাঁদের থেকে পুজোর অধিকার কেড়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছিল গোটা পৃথিবী যেখানে এতটা এগিয়ে গিয়েছে সেখানে কেন মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে এভাবে দাস সম্প্রদায়কে দূরে সরিয়ে রাখার প্রথা? অনেকের মতে এটা কুপ্রথা। এই প্রথা কেন আজও বাংলায়?
এনিয়ে শোরগোল পড়তেই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মঙ্গলবার বিকালে কাটোয়ার মহকুমা শাসক বৈঠক ডাকেন। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্য়ায়, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক ও পুলিশ কর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। শেষ পর্যন্ত সমস্যা মেটে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অন্যদের মতোই দাস সম্প্রদায়ের সদস্যরাও গীধেশ্বর মন্দিরে প্রবেশ ও পুজো দিতে পারবেন। আর কোনও বাধা রইল না। একটা ‘কু প্রথা’ থেকে কার্যত মুক্ত হল বাংলা। মুক্ত হল কাটোয়া।
সূত্রের খবর, বুধবার থেকে সকলেই পুজো দিতে পারবেন। দাস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ও মন্দির কমিটির লোকজনও ছিলেন বৈঠকে। সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত নেন এই মন্দিরে প্রবেশের অধিকার সকলেরই।
আসলে সূত্রের খবর, এই মন্দিরে দীর্ঘদিন ধরেই দাস সম্প্রদায়ের মানুষদের এই মন্দিরে পুজো দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু ভগবান তো সবার। সেক্ষেত্রে কোনও একটি সম্প্রদায় কেন মন্দিরে পুজো দিতে পারবেন না? প্রশ্ন উঠেছিল সম্প্রতি শিবরাত্রিতে। স্থানীয় দাস সম্প্রদায়ের সদস্যরা দাবি তোলেন আমরাও পুজো দেব। পুজো দেওয়ার অধিকার আছে আমাদেরও। বাস্তবিকই এগিয়ে থাকা এই বাংলায় কেন থাকবে পিছিয়ে থাকা এমন একটা প্রথা?
প্রশ্নটা উঠতে থাকে বিভিন্ন মহলে। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন এই শিবমন্দিরের কাছেও ওঠে এক নতুন দাবি, পুজোর অধিকার দিতে হবে দাস সম্প্রদায়কেও।
দাস সম্প্রদায় প্রশ্ন তুলেছিল, আমরা তো একই গ্রামে থাকি। একসঙ্গেই চলাফেরা করি। কিন্তু কেবলমাত্র মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার আমাদের কেন থাকবে না?
একদিকে সেই জমিদারি আমলের রীতি। অন্যদিকে মহাদেবের কাছে পুজোর অধিকার দেওয়ার জন্য দাবি দাস সম্প্রদায়ের। কার্যত দ্বিধায় পড়েছিলেন অনেকেই। শ্যাম রাখি নাকি কূল রাখি অবস্থা। সেই অবস্থাতেই আলোচনার মাধ্যমে কেটে গেল জট। নতুন আলোয় উদ্ভাসিত মন্দির প্রাঙ্গন।