এই সময়: খাণ্ডব দহনের পরে অগ্নিদেবের সৌজন্যে তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের হাতে এসেছিল গাণ্ডীব ধনুক এবং অক্ষয় তূণীর। গণ্ডারের মেরুদণ্ড দিয়ে তৈরি ওই ধনুক কখনও ভাঙত না আর ‘অক্ষয় তূণীরের’ তির কখনও শেষ হতো না। দোলের দিনে বন্ধুদের সঙ্গে রং খেলতে গিয়ে পিচকারি খালি হয়ে গিয়ে ঘোর ‘বিপদে’ পড়ে বহু খুদেই। কিন্তু এ বারের দোলে শহরের বাজারে এসে পড়েছে মহাভারতের অর্জুনের মতোই ‘অক্ষয় পিচকারি’। তার সঙ্গে ১ থেকে দেড় লিটার পর্যন্ত রং বহন করার মতো একটি ‘ট্যাঙ্কার’ রয়েছে। ফলে দোলের হুল্লোড়ে হঠাৎ করে ‘নিরস্ত্র’ হয়ে বন্ধুদের মাঝে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
মাঝে শুধু বৃহস্পতিবার। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে দোলের মজা। দোল এলেই খোঁজ নেওয়া শুরু হয় এ বার ‘বাজারে নতুন কী এল’। গত কয়েক বছর ধরেই পিচকারির বাজারে তুমুল জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে ‘ই–পিচকারি’ বা বৈদ্যুতিন পিচকারি। অতীতের মতো বালতিতে রং গুলে সেই রং পিচকারিতে টানার অভ্যাস প্রতি বছরেই কমছে। মোবাইল চার্জারের মতোই ইউএসবি পোর্টে পিচকারির ব্যাটারি চার্জ করে তারপর স্নাইপারদের মতোই নিখুঁত লক্ষ্যে রঙের আঘাত হানাই এখন ফ্যাশন। জানবাজারের ব্যবসায়ী রাজেশ পাসোয়ান বলেন, ‘বাজারে যে ইলেকট্রনিক ওয়াটার গান এসেছে, তাদের দাম ৫০০ টাকা থেকে দু’হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এই ধরনের পিচকারি সবই ব্যাটারি–চালিত। ২৫ থেকে ৫০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত রঙের ফোয়ারা নির্ভুল লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।’
এ ছাড়াও বাজারে এসেছে ‘কালার সিলিন্ডার’। আগুন নেভানোর সিলিন্ডারের মতোই দেখতে এই রঙের সিলিন্ডারের দাম ১৬০০ টাকা, নাম ‘কালার থান্ডার’। ব্যবসায়ী দীপক সাহু বলছেন, ‘একবার স্টপকক খুলে রঙের ফোয়ারা চালু করে দিলে অনেকটা এলাকা রঙিন হয়ে যাবে।’ তবে বাজারে রয়েছে ‘কালার থান্ডার’–এরও উন্নততর ভার্শন ‘কালার সাইক্লোন’। সাড়ে চার হাজার টাকা মূল্যের বড়সড় এই সিলিন্ডার একটা গোটা পাড়াকে রঙিন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
গেরুয়া, লাল বা সবুজ রং এবং আবির বহু বছর আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘সম্পত্তি’ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা তাঁদের দলের প্রতীকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা রং নিয়েই দোল খেলেন। এ বার রঙের পাশাপাশি পিচকারির দখলদারিও চলে গিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে। রাজনীতির ময়দানে যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক না কেন, দোলের বাজারে কলকাতার ফুটপাথে নরেন্দ্র মোদী এবং রাহুল গান্ধীর ছবি দেওয়া পিচকারির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই চোখে পড়ে।