সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার
দিনকয়েক আগের কথা। দেড় মাসের এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয় টিকা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে। এর জেরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে লাটাগুড়ি। সড়কে অবরোধ চলে। ভাঙচুর করা হয় একাধিক সরকারি বাসে। সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুপারভাইজ়ার ছিলেন না। টিকার সঙ্গে মৃত্যুর কোনও যোগ এখনও খুঁজে পাওয়া না গেলেও সুপারভাইজ়ারহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যা ফের সামনে চলে এসেছে। জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা চলছে অভিভাবক ছাড়াই।
স্বাস্থ্য দপ্তরের গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামোর মেরুদণ্ড ধরা হয় যাঁদের, সেই সুপারভাইজ়ারদের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কমপক্ষে একজন তত্ত্বাবধায়ক বা সুপারভাইজ়ার স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষে সামগ্রিক কাজ সামাল দেন। সেই পদ মহকুমার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শূন্য পড়ে রয়েছে। টিকা ঘিরে আলোচনায় আরও একবার বিতর্ক দানা বেঁধেছে এই সুপারভাইজ়ারদের ঘিরে। শিশুদের ভ্যাকসিনেশন বা টিকাকরণের কার্যক্রমে নজরদারি করা সুপারভাইজ়ারদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
ভ্যাকসিন ব্লক স্তর থেকে গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এসে তা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা তত্ত্বাবধায়কদের মূল কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। মালবাজার স্বাস্থ্য ব্লকে ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২ জন সুপারভাইজ়ার থাকার কথা। কিন্তু, এখন একজনও সেই পদে নেই। জলপাইগুড়ি জেলার প্রত্যন্ত ব্লক হিসেবে পরিচিত নাগরাকাটায় অন্তত তিনটি স্থায়ী সুপারভাইজ়ারের পদ খালি পড়ে রয়েছে। মালবাজারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপঙ্কর কর এই শূন্যতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। বলেন, ‘সুপারভাইজ়ার পদ সব জায়গাতেই খালি পড়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে।’
সব এলাকাতেই অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে সুপারভাইজ়ারদের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ সুপারভাইজ়ারদের যে ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয় বা পরবর্তীতে যে ধরনের প্রশিক্ষণ তাঁরা পেয়ে থাকেন, তার কোনওটাই এই অস্থায়ী কর্মীদের নেই বলেই দাবি স্বাস্থ্যকর্মীদেরই একাংশের।
তাঁদের বক্তব্য, এই অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের শুধুমাত্র পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধের কাজে ব্যবহারের জন্যই নিয়োগ করা হয়েছিল। তাই লাটাগুড়ির ঝাড়মাটিয়ালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুমৃত্যু আবার সেই চেনা প্রশ্নটিকে সামনে এনে দিয়েছে। শিশুকন্যার মৃত্যুর সঙ্গে টিকার ভুল প্রয়োগের কোনও যোগ না প্রতিষ্ঠিত না হলেও সুপারভাইজ়ার নেই, এমন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই টিকা দেওয়া হয়েছিল। এমনিতেই গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র নানা পরিষেবার ঘাটতিতে ধুঁকছে। তার উপরে সুপারভাইজ়ার পদ খালি পড়ে থাকায় সমস্যা আরও ঘোরালো হয়েছে।