• ব্রাত্যর সঙ্গে কথা বলল পুলিশ, আজ হাইকোর্টে যাদবপুর কেস?
    এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: গত ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার সভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে বিক্ষোভ, ধাক্কাধাক্কি, গাড়ি ভাঙচুর এবং গাড়ির ধাক্কায় ইন্দ্রানুজ রায় নামে এক ছাত্রের জখম হওয়ার ঘটনা নিয়ে আজ, বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা কলকাতা পুলিশের। তার আগে এই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা।

    সূত্রের খবর, তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সে দিন ক্যাম্পাসে ঠিক কী হয়েছিল, কেন পড়ুয়ারা তাঁর সভা ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা, মন্ত্রীর গাড়ি ক্যাম্পাসে কতক্ষণ আটকে ছিল, মন্ত্রী কখন, কী ভাবে ও কাদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছিলেন। যাদবপুরের ইংরেজির স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজই বা কী ভাবে আহত হয়েছিলেন, তা–ও জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছ থেকে। এর আগে মন্ত্রীর গাড়ির চালকের সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারী অফিসাররা। সে দিন ক্যাম্পাসে যে গাড়িতে গিয়েছিলেন ব্রাত্য, সেটিও ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

    কলকাতা পুলিশের এক কর্তা মঙ্গলবার বলেন, ‘গত কয়েকদিনের তদন্তে যে যে বিষয় উঠে এসেছে, সেই রিপোর্টই আদালতে জমা পড়বে। সে দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রীও। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি কী দেখেছেন, সে বিষয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তদন্ত চলছে।’

    প্রসঙ্গত, ১ মার্চই যাদবপুর থানায় তৃণমূলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা, শিক্ষাবন্ধু সমিতির বিনয় সিং, টিএমসিপি–র কর্মী ও সমর্থকরা মিলে মোট পাঁচটি এফআইআর করেছিলেন। ভাঙচুর, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, মন্ত্রীকে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশের তরফে দু’টি সুয়োমোটো এফআইআর করা হয়েছিল। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র সংগঠনগুলি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয় আদালতে।

    হাইকোর্টে মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, রাজ্যের শাসকদলের অনুমোদিত ওয়েবকুপা, শিক্ষাবন্ধু সমিতি এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগকে পুলিশ গুরুত্ব দিলেও আহত ছাত্র ও আন্দোলনকারীদের বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ যাদবপুরের ঘটনার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে দায়ী করার পাশাপাশি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর নির্দেশ ছিল, পুলিশের কাছে পাঠানো আহত ইন্দ্রানুজের ই–মেলকেই এফআইআর হিসাবে গণ্য করে পুলিশকে অবিলম্বে তদন্ত করতে হবে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ ৭ মার্চ ওই ই–মেলকে এফআইআর হিসাবে নথিভুক্ত করেছিল।

    আদালত সূত্রে খবর, যাদবপুরের গোলমালে পুলিশের যুগপৎ অতি–সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আজ বিকেল চারটেয় মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর সুপ্রিম কোর্টে পদোন্নতি হওয়ার জন্য বিকেল সাড়ে তিনটেয় তাঁকে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে ফেয়ারওয়েল দেওয়ার কথা। ফলে যাদবপুর সংক্রান্ত এই মামলার আজ শুনানি হবে কি না, তা নিয়ে আইনজীবী মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে কলকাতা পুলিশের তরফে ইতিমধ্যে যাদবপুরের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত, তৃণমূলের অধ্যাপক নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র, ইন্দ্রানুজ এবং ব্রাত্যর গাড়ির চালক রেহান মোল্লার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েকজন পড়ুয়াকেও থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

    এদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি যাদবপুর ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ওমপ্রকাশের উপর শারীরিক আক্রমণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন উপাচার্যরা। এমনকী সোমবার ১০ মার্চ, যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পিজি আর্টস ভবনে ওমপ্রকাশকে তাঁর অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি একদল ছাত্রের অত্যন্ত আপত্তিকর পোস্টার প্রদর্শনেরও তীব্র নিন্দা করেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, কোনও শিক্ষককে তাঁর শিক্ষাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে যে, একজন প্রবীণ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ সম্বলিত অশ্লীল পোস্টার প্রদর্শন যাদবপুরের মতো প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করে।

  • Link to this news (এই সময়)