• মাটির রাস্তায় ছেলেবেলার পায়ের ছাপ ভুলব কী করে
    এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৫
  • রূপক সরকার | ডালাস

    ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাট চুকিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম সুদূর আমেরিকায়। চোখে নতুন স্বপ্ন, মনে ভবিষ্যতের পথ তৈরির তাগিদ। আজ আমি ডালাসের ব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত। তবু মনে হয়, কোথাও যেন একটা শূন্যতা, একটা অপূর্ণতা জমে আছে হৃদয়ের কোণে।

    আসলে যত দূরেই যাই না কেন, ফেলে আসা দুপুরের গল্প, পাড়ার মোড়ে আড্ডা, কাঁচা রাস্তায় ছেলেবেলার পায়ের ছাপ—এ সব কি কখনও মন থেকে মুছে ফেলা যায়? আমি উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে স্কুলজীবন শুরু করি, তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য কলকাতায়। ২০১২ সালে বিটেক শেষ করার পরে উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৩ সালে আমেরিকার সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে আসি। এখন স্যাটেলাইট রেডিও কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করি

    আমেরিকায় জীবন সুন্দর, কিন্তু একই সঙ্গে একঘেয়ে। এখানে নিয়ম মেনে চলে সব কিছু। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্দিষ্ট ছন্দে চলে জীবন। সব কিছু ঠিকঠাক চললেও, মনের এক কোণে বরাবরই থেকে যায় এক অপূর্ণতা। কলকাতার সেই ব্যস্ততা, বন্ধুদের সঙ্গে ফ্রি–মুডে গল্প, আড্ডার মুহূর্ত, পরিবারকে কাছ থেকে দেখার অনুভূতি—এ সবের কিছুই এখানে নেই।

    সেই কারণে আমি প্রতি বছরই চেষ্টা করি দেশে ফেরার, বিশেষ করে দুর্গাপুজোর সময়ে। পূজোর সেই আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল, ধুনোর গন্ধ, বেজে ওঠা ঢাকের আওয়াজ—সবকিছু যেন হৃদয়কে খুব নাড়া দেয়। অনেক সময়ে বাড়িতে বা বন্ধুদের ফোন করলে যখন শুনি, পরিবারের সকলে একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, বন্ধুরা মেতে আছে বিয়ে বা কোনও অনুষ্ঠানে, তখন মনের ভিতরটা হাহাকার করে ওঠে। এই অনুভূতি কেবল প্রবাসীরাই বুঝতে পারে। অন্য কেউ নয়।

    এখানে কাজের চাপ বেশি, জীবনযাত্রা দ্রুতগতির, সবাই নিজের নিজের জগতে ব্যস্ত। এখানে চট করে কাউকে ডেকে নেওয়া বা হঠাৎ সন্ধ্যাবেলা গল্পের আসর বসানো কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। সাধারণত, সবাই সপ্তাহের দিনগুলোতে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু উইক এন্ডে পরিকল্পনা করে একসঙ্গে হওয়া সম্ভব। তবুও, সেই হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া আড্ডার স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দটা এখানে অনেকটাই কমে যায়। তবুও, আমি কৃতজ্ঞ যে জীবনের এই যাত্রায় আমি পরিবারের সঙ্গে আছি, কর্মজীবনে সফল হয়েছি, আর মাঝে মাঝে হলেও দেশে ফিরে যেতে পারি। জীবন হয়তো একটু একঘেয়ে, কিন্তু স্মৃতিগুলোই বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। বাংলার সেই মাটি, আকাশ, মানুষ—সবকিছুই আজও গেঁথে আছে, মনের ভিতরে এক বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে। প্রবাসে থাকলেও, সেই টান কোনও দিন কমবে না।

  • Link to this news (এই সময়)