• মালদায় অস্ট্রেলেশিয়ান গ্রাস আউল! বাংলার মাটিতে ৪৫ বছরে প্রথম দেখা
    এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    গঙ্গার চরের উপর দিয়ে পাক খেয়ে নামছিল পাখিটা। সেই সময়েই লেন্সবন্দি হয় সে। যাঁর ক্যামেরা, তিনি যদি নিছক হাত পাকানোর জন্য ছবিটা তুলতেন, তা হলে হয়তো ওই পাখির গুরুত্ব বুঝতেন না। কিন্তু, বাংলার তথা ভারতীয় পক্ষীপ্রেমীদের সৌভাগ্য, ওই আলোকচিত্রী নিজেও একজন পাখি বিশেষজ্ঞ। তাই অস্ট্রেলেশিয়ান গ্রাস আউলটিকে (Tyto longimembris) চিনতে দেরি হয়নি তাঁর। যদিও দৈবক্রমে যার ছবি তুলে ফেলেছেন তিনি, তার শনাক্তকরণ নিয়ে নিজেই সংশয়ে ছিলেন প্রথমটা। পরে অবশ্য সব সংশয় কেটে যেতে সময় লাগেনি।

    ১৯৮০ সালে শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বসে এমন পাখির দেখা পেয়েছিলেন প্রখ্যাত পক্ষীবিদ অজয় হোম। তবে, ওই পাখির কোনও ছবি তুলতে পারেননি তিনি। তার প্রায় ৬০ বছর আগে ১৯২০–তে জলপাইগুড়িতে অস্ট্রেলেশিয়ান ঘাস পেঁচার দেখা পেয়েছিলেন প্রকৃতিবিদ সিএম ইংলিস। তিনি সেই ঘটনার রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটিতে। তবে, তিনিও ওই পাখির কোনও ছবি তুলতে পারেননি। সেই হিসেবে ৯ মার্চ মালদায় সন্দীপ দাস, স্বরূপ সরকার এবং সৈকত দাসের তোলা ওই ছবিটিই বাংলার মাটিতে তোলা অতি বিরল এই পেঁচার প্রথম এবং একমাত্র ছবি বলে মনে করা হচ্ছে। বন দপ্তরের কর্মীরাও এমনটাই মনে করছেন।

    বাংলায় এমন প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া প্রসঙ্গে বন দপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, ‘মালদার গঙ্গার চর এবং আদিনা ডিয়ার ফরেস্টে শীতে বহু পাখি বিদেশ থেকে আসে। এটা হলো পাখিদের সেন্ট্রাল এশিয়ার ফ্লাই রুট।’ ডিসেম্বর মাস থেকে গঙ্গার চরে পাখি শুমারির কাজ শুরু করেছে বন দপ্তর এবং পাখি বিশেষজ্ঞদের মিলিত একটি দল।

    ওই কাজের সময়েই ৯ মার্চ এক পাখি বিশেষজ্ঞের ক্যামেরায় অস্ট্রেলেশিয়ান ঘাস পেঁচার ছবিটি ক্যামেরাবন্দি হয়। বন দপ্তরের আশা, মালদার গঙ্গার চরে এই ধরনের আরও বিলুপ্ত প্রজাতির পাখির থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। পাখি বিশেষজ্ঞ এবং গ্রিন পিপলস ইন্ডিয়া নামক একটি সংস্থার মালদা জেলার সম্পাদক শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে যে পাখি শুমারির কাজ চলছে তাতেই গঙ্গার চরে এই পাখির দেখা মিলেছে।’

    মালদার বিভাগীয় বনাধিকারিক জেজু জেসফার এই খোঁজকে ‘যুগান্তকারী’ বলে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এই প্রজাতির পাখির এই প্রথম আলোকচিত্র রেকর্ড নথিভুক্ত হয়েছে মালদায়। বন দপ্তর জানাচ্ছে, পাখিটির নিরাপত্তার জন্যই মালদার ওই গঙ্গার চরের নাম গোপন রাখা হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)