• কাগজ ছিঁড়ে বিধানসভায় এ বার আর কাগজ পাবেন না বিজেপি বিধায়করা
    এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: যদি কাগজে লেখো নাম, কাগজ ছিঁড়ে যাবে...!হৃদয়ে নাম লেখা বা না-লেখা নিয়ে নয়, তবে কাগজ ছেঁড়া নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ধুন্ধুমার রাজ্য বিধানসভায়। মঙ্গলবার বিধানসভায় কাগজ ছেঁড়া নিয়ে যা হলো, তা বেনজির বলে মনে করছেন বহু প্রবীণ বিধায়ক। বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা হোক অথবা লোকসভা-রাজ্যসভা— বুলেটিনের কাগজ ছিঁড়ে ওয়েলে নেমে বিরোধীদের প্রতিবাদের দৃশ্য ভারতের রাজনীতিতে বহু সময়েই দেখা গিয়েছে।

    কিন্তু তা বলে বিরোধীদের হাতে বুলেটিনের কাগজ দেওয়াই বন্ধ! এ দিন রাজ্য বিধানসভায় পদ্ম-বিধায়কদের কাগজ কুচিয়ে প্রতিবাদের জেরে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিধানসভায় বিজেপি এমএলএ-দের আর বুলেটিন–সহ অন্যান্য সরকারি কাগজ দেওয়া হবে না। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক বলে অভিযোগ তুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, স্পিকারের এই সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন।

    অতীতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধীদের সঙ্গে এ রকম আচরণ কখনও করা হয়নি। যদিও স্পিকারের পাল্টা দাবি, এ ভাবেও কোনও দিন বিরোধীরা সরকারি কাগজ ছেঁড়েননি বিধানসভায়। হাউসে সরকারি কাগজ কুচিয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করতে স্পিকার এমন সিদ্ধান্ত নিলেও কি কাগজ ছেঁড়া বন্ধ হবে? এখনই বলা কঠিন। কারণ, শুভেন্দু জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে বিজেপি বিধায়করা নিজেরাই দিস্তা দিস্তা কাগজ সঙ্গে নিয়ে যাবেন সেগুলি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য।

    এ দিন বিধানসভায় গেরুয়া শিবির অভিযোগ তোলে, ধর্মীয় স্থান রক্ষা করার কথা সংবিধানে বলা থাকলেও বাংলায় তৃণমূলের জমানায় তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চান পদ্ম বিধায়করা। স্পিকার সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। এরপরেই অধিবেশন কক্ষে স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পদ্ম–বিধায়করা। তাঁরা দাবি করেন, বিষয়টি বিধানসভার রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাতেও রাজি হননি স্পিকার। এরপরই ওয়েলে নেমে বুলেটিন–সহ অন্যান্য সরকারি কাগজ ছিঁড়ে বিধানসভা কক্ষ ত্যাগ করেন শুভেন্দুরা। তাঁদের বুলেটিন ছেঁড়ার ‍প্রবণতার নিন্দা করে স্পিকার জানিয়ে দেন যে, বিজেপি বিধায়কদের আর বুলেটিনই দেওয়া হবে না।

    পরে তিনি বলেন, ‘যে ভাবে ওঁরা (বিজেপি বিধায়করা) সরকারি কাগজ ছিঁড়ছিলেন, তা দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামিকাল থেকে কোনও সরকারি কাগজ ওঁদের দেওয়া হবে না। ওঁরা যেখান থেকে পারবেন, বুলেটিন জানবেন। বুলেটিন–সহ স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট ওঁরা ছিঁড়ে ফেলেছেন। যাতে ওঁরা আর সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করতে না–পারেন, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।’ তাঁর সংযোজন, ‘এ রকম পরিস্থিতি আগে কখনও বিধানসভায় হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে ‍না। ওঁরা সোমবারও একই কাজ করেছিলেন। ভেবেছিলাম, আজ (মঙ্গলবার) হয়তো ওঁরা সংযত হবেন। কিন্তু দেখলাম, প্রবল উৎসাহে ওঁরা কাগজপত্র ছিঁড়ছেন এবং এমন অঙ্গভঙ্গি করছেন যা খুবই দৃষ্টিকটু।’ বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে স্পিকারের বার্তা, ‘বিধানসভার শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। আমার একার নয়। সবাইকে বিধানসভার মর্যাদা বুঝতে হবে।’

    স্পিকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিধানসভা চলাকা‍লীন বিরোধী বিধায়কদের বুলেটিন–সহ অন্যান্য কাগজ না–দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত স্পিকার নিয়েছেন, তা গণতন্ত্র বিরোধী। এটা ভারতীয় সংবিধানের বিরলতম ঘটনা।’ এরপরই বিরোধী দলনেতার পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘প্রয়োজনে আমরা, বিজেপি বিধায়করা প্রত্যেকে এক দিস্তা করে কাগজ নিয়ে যাব। এবং বিধানসভায় গিয়ে ছিঁড়ে আসব।’ তাঁর এই হুঁশিয়ারি যে আজ বুধবারই বাস্তবায়িত হতে পারে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক বৈঠক থেকে শুভেন্দুর বার্তা, ‘বুধবার ব্যাপক বিক্ষোভের জন্য স্পিকারকে প্রস্তুত থাকতে বলছি। আমাদের বিধায়করা বুধবার ফের মুলতুবি প্রস্তাব আনবেন। এক ইঞ্চি জমিও আমরা ছাড়ব না।’

  • Link to this news (এই সময়)