অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
কয়েকশো বছরের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে অবশেষে মিলল মন্দিরে প্রবেশাধিকার। শিবমন্দিরে পুজো করার অধিকার পেলেন কাটোয়ার গিধগ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দারা। প্রথমবার মন্দিরে ঢোকার অনুমতি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তাঁরা। আবেগে কারও কারও চোখে জল। বুধবার প্রশাসনের উপস্থিতিতে গিধেশ্বর শিবমন্দিরে পুজো দিলেন ষষ্ঠী দাস, সান্ত্বনা দাসেরা।
কাটোয়া-১ ব্লকের গিধগ্রামের শিবমন্দির সাড়ে ৩০০ বছরের পুরোনো। এখানে শিবের নাম গিধেশ্বর। নিত্যসেবা হয় গিধেশ্বরের। শিবরাত্রি, গাজনে থিকথিক করে পুণ্যার্থীদের ভিড়। তবে এই মন্দিরে এত দিন চর্মকার বা চামার সম্প্রদায়ের মানুষের ঢোকার অধিকার ছিল না।
স্থানীয় দাসপাড়ার প্রায় ১০০টি পরিবারের এই মন্দিরে পুজো দেওয়ার অনুমতি ছিল না। এত দিন এই অলিখিত নিদানকে দস্তুর বলে মেনে নিয়েছিলেন দাসপাড়ার বাসিন্দারা। তবে এই বছর শিবরাত্রির দিন সরব হন তাঁরা। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিবরাত্রির দু’-তিন দিন আগে গিধগ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ ছিল, চামার সম্প্রদায়ের বলে গিধেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।
এ নিয়ে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। দিন চারেক আগে ফের পুজো দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন দাসপাড়ার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার আবারও বৈঠক হয় মহকুমা শাসকের দপ্তরে। মহকুমা শাসক ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন কাটোয়া ও মঙ্গলকোটের বিধায়ক, পুলিশ আধিকারিক ও গ্রামের দুই পক্ষের মানুষ।
বৈঠকের শেষে সবার পুজো করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে সম্মত হন মন্দিরের সেবায়েতরা। দাসেদের পুজো দিতে বাধা দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয় সেই বৈঠকে। দাসপাড়ার এককড়ি দাস, মদন দাসরা জানিয়েছিলেন, শিবপুজোর অধিকার চেয়েছিলেন তাঁরা। তা মানা হয়েছে। বুধবার থেকেই মন্দিরে প্রবেশের অধিকার পাবেন তাঁরা।
সেই মতোই এ দিন সকালে ৫ জন পুজো দিতে যান। পাটভাঙা শাড়ি পরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন সান্ত্বনা দাস। তিনি জানান, বিয়ের পর বহু বছর কেটে গিয়েছে, এত দিনে এই প্রথম বার মন্দিরে ঢুকতে পারলেন। এতদিনের আফশোস অবশেষে ঘুচল।
এ দিন রেকাবে পাঁচ রকমের ফল, মিষ্টি সাজিয়ে তিনি পুজো দিতে যান। সান্ত্বনা বলেন, ‘এত ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের পাঁচ জনেরই পুজো নিয়েছে। জলও ঢাললাম শিবলিঙ্গে। সব থেকে ভালো লাগছে গ্রামের সকলে আমাদের হাতে হাত মিলিয়েছেন, প্রশাসনও সব রকম ভাবে সহযোগিতা করেছে।’
মন্দিরের সেবায়েত বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়, জগন্নাথ চক্রবর্তীরা জানান, সকলে যে ভাবে পুজো দেন, দাসপাড়ার লোকজনও এ দিন সে ভাবেই পুজো দিলেন। পুজো দিয়ে সকলের মুখেই শান্তির হাসি।