বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের লালবাঁধের জলাশয় থেকে উদ্ধার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর দেহ। মৃতের নাম সৌমেন ঘোষ। মঙ্গলবার দুপুরে কিছু নথি ফটোকপি করানোর জন্য সৌমেন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তিনি বাড়ি না ফেরায় খোঁজ শুরু করে বাড়ির লোকজন। বিষ্ণুপুর থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ লালবাঁধের ধারে তাঁর সাইকেল পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন। পাশেই পড়েছিল জিন্সের ট্রাউজার্স, শার্ট, জুতো। পরে ডুবুরি নামিয়ে সৌমেনে দেহ উদ্ধার হয় জলাশয় থেকে।
বিষ্ণুপুরের ছেলে সৌমেন ছোট থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিকের কেমিস্ট্রি পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষা দিয়ে ফিরেই তিনি স্থানীয় একটি দোকানে কিছু নথি ফটোকপি করাতে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিবেশী পার্থ পাখিরা জানান, দুপুর ৩টে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সৌমেন। বাড়িতে মোবাইল ফোন রেখে গিয়েছিলেন। তাই কোনও ভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। থানায় জানানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জায়গার সিসিটিভি ফুটেজও দেখা হয়।
কিন্তু কোথাও কোনও তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পর সকলে মিলে লালবাঁধের দিকে যান। অন্য এক প্রতিবেশী বিশ্বনাথ রুইদাসের কথায়, ‘লালবাঁধে প্রথম বার যখন খুঁজতে আসি, তখন পাইনি। এমনকী ওর সাইকেলও পড়ে থাকতে দেখিনি। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ফের ওই জায়গায় গিয়ে দেখি সাইকেল পড়ে আছে, জামা-প্যান্টও পড়ে রয়েছে।’
সৌমেনের মৃত্যুতে রহস্য ঘনাচ্ছে । আত্মহত্যা নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, কেন প্রথম বার লালবাঁধে গিয়ে সৌমেনের সাইকেলটি দেখতে পেলেন না পরিবারের লোকজন? কেনই বা পোশাক লালবাঁধের ধারে পড়েছিল? এটি আত্মহত্যা, না এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন সৌমেনের শিক্ষকরা। তাঁর ফিজিক্সের শিক্ষক অনবরত কাঁদছিলেন। তিনি জানান, সৌমেন শুধু পড়াশোনাতেই ভালো ছিলেন না, তাঁর হাস্যরস বোধও ছিল মারাত্মক। সকলেই পছন্দ করতেন তাঁকে। এমন প্রাণচঞ্চল ছাত্রের মনে কী ছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন পরিবার লোকজন, প্রতিবেশী ও তদন্তকারীরা।