এই সময়, দিঘা: সমুদ্রের ধারে বসে রয়েছেন একদল পর্যটক। কারও হাতে চিপস তো কারও হাতে জলের বোতল। খাওয়া শেষে তাঁদের দেখা গেল সমুদ্রে সে সব ছুড়ে ফেলে দিতে!
এমন দৃশ্য দিঘায় প্রায়ই দেখা যায়। সমুদ্রে ভাসে কোল্ড ড্রিঙ্কস, জলের বোতল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রকৃতি। শুধু সমুদ্রই নয়, দিঘা জুড়ে রাস্তায় ছড়ানো থাকে আবর্জনা। তাতে রাশ টানতে এ বার নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। দিঘা বেড়াতে এসে এ ভাবে যদি দিঘাকে কেউ নোংরা করেন, তা হলে তাঁকে জরিমানা পর্যন্ত দিতে হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
শুধু পর্যটকরাই নন, হোটেল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং এলাকার বাসিন্দাদের কেউ যত্রতত্র ময়লা ফেললে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। প্লাস্টিকমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন দিঘা গড়ে তুলতে মঙ্গলবার থেকে পোর্টাল চালু করেছে দিঘা–শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)। তাতে রয়েছে বিশেষ অ্যাপও। এই বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে হোটেলের কিউআর কোড স্ক্যান করে হোটেল থেকে আবর্জনা সংগ্রহের হিসেব রাখবে ডিএসডিএ। এ দিন পর্ষদের প্রশাসনিক ভবনে এক অনুষ্ঠানে এই পোর্টাল ও অ্যাপের উদ্বোধন করেন মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী।
ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, দেশের মধ্যে দিঘাতেই এই প্রথম বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অ্যাপ চালু করা হলো। দিঘার ৮০০টি হোটেলের মধ্যে কতগুলি হোটেল থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা হলো, তা এ বার খুব সহজেই বোঝা যাবে। এমনকী, কত পরিমাণ বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে, তা–ও জানা যাবে। এ দিন মন্ত্রী একটি হোটেলের কিউআর কোড স্ক্যান করে এই পরিষেবা চালু করেন। বর্জ্য গাড়িরও উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রায় পাঁচটি গাড়ি দিঘা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বিভিন্ন হোটেল ও বাড়ির থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে। বর্জ্য সংগ্রহের সময়ে চলবে সচেতনতামূলক গান। এ দিনই অনুষ্ঠানের পরে দিঘার সৈকত জুড়ে আবর্জনা সাফাই অভিযান চালানো হয়। দিঘার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘মানুষকে সচেতন করতে পারলেই গড়ে উঠবে পরিষ্কার দিঘা। তা ছাড়া নুলিয়া, সাফাই কর্মী, গ্রিন গার্ডদের আরও আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
কোনও পর্যটককে সমুদ্রে কিংবা পথেঘাটে আবর্জনা ফেলতে দেখলেই ছবি তুলে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিতে বলা হয়েছে। এর জন্য দিঘা–শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে। প্লাস্টিকমুক্ত দিঘা গড়তেই এই সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, দিঘাকে ১২টি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। সেই জ়োনে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরাই ওই গ্রুপে থাকবেন। দিঘা জুড়ে নজরদারি চালানোর জন্য আরও ১৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এর মাধ্যমে নিরাপত্তায় যেমন নজরদারি চালানো হবে, তেমনই শহরকে সাফ রাখার দিকটিও দেখা হবে। তিনি বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সমুদ্রে আবর্জনা ফেললেই জরিমানা দিতে হবে।’
নিউ দিঘার দত্তপুরের কাছে ১০ একর জায়গার উপর সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট গড়ে তুলেছে পর্ষদ। সংগ্রহের পর আবর্জনা ওই জায়গায় নিয়ে গিয়ে পৃথক করা হবে। সেই আবর্জনা থেকে তৈরি হবে সার। এ দিনের অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, কাঁথির মহকুমাশাসক, দিঘা–শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক, রামনগরের বিডিও, রামনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, দিঘার দু’টি থানার ওসিও উপস্থিত ছিলেন।