• প্রতিটি আবেদন খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে দেরি হচ্ছে পাসপোর্ট পেতে
    এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: গত বছর ডিসেম্বরে সংসদে কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং একটি প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, ভারতে সাধারণ পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য গড়ে ১৫ দিন সময় লাগার কথা। অভিযোগ, কয়েকটি রাজ্যে সেই সময়সীমা তুলনায় অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে। তা আরও কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সব রাজ্য ও রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসগুলিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি আরও সহজ করা হচ্ছে। সত্যিই কি তাই হচ্ছে?

    বাস্তবে এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশ এলাকায় পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্তও সময় লেগে যাচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন বিপুল আবেদনকারী। পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে এপ্রিল–মে নাগাদ পাসপোর্টের আবেদন সবথেকে বেশি জমা পড়ে। এই সময়ে অনেকেই বিদেশে পড়তে বা চাকরির সন্ধানে যান। নভেম্বর–ডিসেম্বর নাগাদও বেড়াতে যেতে অনেকে পাসপোর্টের আবেদন করেন। এ ছাড়াও পরিযায়ী শ্রমিক, রোগীর পরিজনও সারা বছর নতুন পাসপোর্ট বা পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণের আবেদন করেন। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, পরিচয়পত্র হিসেবেও অনেকে পাসপোর্ট করিয়ে রাখছেন।

    পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কলকাতায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্রে প্রতি বছর গড়ে ছ’লক্ষের আশপাশে পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়ছে। ২০১৭–য় কলকাতায় পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনে গড়ে সময় লাগত ৪১ দিন। সেই সময়সীমা কমাতে ২০১৮ নাগাদ প্রত্যেক আবেদনকারীর ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়ম সামান্য বদল করা হয়। শুধুমাত্র সন্দেহজনক আবেদনকারীদের ঠিকানা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নথি যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ২০২০–২১ নাগাদ পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময়সীমা কমে গড়ে ২৩ দিনে নেমে আসে। গত কয়েক বছরে এ ক্ষেত্রে সময় লাগছিল গড়ে ১৫–১৮ দিনের মতো। তবে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের অভিজ্ঞতা বলছে, গত জানুয়ারি থেকে এই সময়সীমাটা একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।

    নেপথ্যের কারণ?

    পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর কলকাতা ও শহরতলিতে ভুয়ো নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির একাধিক র‍্যাকেট ধরা পড়ে। তদন্তে কলকাতা পুলিশের সিকিউরিটি কন্ট্রোলের আধিকারিক ও ডাক বিভাগের কর্মীর নামও জড়ায়। জানা যায়, টাকার বিনিময়ে ভুয়ো নথির ভিত্তিতেই অনেক পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নথি যাচাই–ই করা হয়নি। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে বাংলাদেশি নাগরিকেরা ওই পাসপোর্ট নিয়ে মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন। এরপরেই পাসপোর্টের নথি যাচাইয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করে লালবাজার।

    নতুন কী ব্যবস্থা?

    লালবাজার সূত্রের দাবি, তিনটি মূল সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশনে। প্রথমত, প্রত্যেক অফিসারকে সশরীরে আবেদনকারীর ঠিকানায় গিয়ে নথি যাচাই করতে হবে। তা অক্ষাংশ–দ্রাঘিমাংশ সমেত আপলোড করতে হবে নির্দিষ্ট অ্যাপে। দ্বিতীয়ত, আবেদনকারীর বার্থ সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত প্রতিটি নথি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে বা জেলার পুরসভা, স্কুল, বোর্ডের কাছ থেকে যাচাই করাতে হবে। তৃতীয়ত, পুলিশের খাতায় অভিযোগ থাকলেও অনেকে তা আড়াল করেই পাসপোর্টের আবেদন করছেন বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে। তাই বাসস্থানের স্থানীয় থানা, পড়াশোনা বা কর্মস্থলের থানাতেও রেকর্ড যাচাই করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া নজরদারিতে প্রতিটি ডিভিশনের ডিসি ও অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

    তথ্য যাচাইয়েই দেরি?

    কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, মাসে গড়ে থানা–পিছু প্রায় ৪০০–৪৫০ ভেরিফিকেশনের আবেদন জমা পড়ে। তার অনেকগুলি ভেরিফাই করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও বিভিন্ন থানায় এই মুহূর্তে গড়ে প্রায় ২০০-৩০০টি পাসপোর্টের আবেদন জমে যাচ্ছে। এ ভাবে সব চেয়ে বেশি আবেদন বকেয়া পড়েছে কলকাতা পুলিশের তিনটি ডিভিশন — সাউথ সুবার্বান, সাউথ ইস্ট ও সাউথ ওয়েস্টে। তথ্য বলছে, কলকাতা পুলিশ এলাকায় আগে মাসে হাজার পাঁচেক আবেদন পাসপোর্ট যাচাইয়ের জন্য বকেয়া পড়ে থাকত। নতুন পদ্ধতিতে সময় লাগছে বেশি।

    ফলে, গত দু’মাসে সেই বকেয়া আবেদনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজারে! অভিযোগ, পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে তথ্য যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠালে তা দীর্ঘ সময় পড়ে থাকছে। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে যাঁদের জন্ম বা পড়াশোনা, তাঁদের শংসাপত্র যাচাই এক মাসের মধ্যে করা সম্ভব। কিন্তু, আবেদনকারীর জন্ম বা পড়াশোনা ভিন রাজ্যে হলে, তা যাচাই করতে অনেক বেশি সময় লাগছে। সে ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশনে এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাতে পারে, দাবি পুলিশের।

    তা হলে উপায়?

    লালবাজার সূত্রের খবর, আপাতত ভেরিফিকেশনের কাজে থানায় স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অফিসারদেরও কাজে লাগানো শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের তিনটি ডিভিশনে পেন্ডিং পুলিশ ভেরিফিকেশনের বোঝা কমাতে মার্চ জুড়ে পাসপোর্ট যাচাইয়ের কাজ করছেন থানায় থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভিশনাল অফিসারেরাও (এডিও)। তিনটি ডিভিশনে ২৮ জন এডিও এই কাজে নেমেছেন। প্রয়োজনে আগামী মাসেও ওই কাজ করবেন তাঁরা।

  • Link to this news (এই সময়)