অ্যাপ ক্যাব চালকের উপস্থিত বুদ্ধির জেরেই ট্রলি বন্দি দেহ লোপাটের আগে হাতেনাতে ধরল পুলিশ। ক্যাব চালকের কথায়, ট্রলি নিয়ে দুই যুবকের টানাটানি দেখেই তাঁর সন্দেহ হয়েছিল। মাথায় ঘুরছিল মধ্যমগ্রামের ঘটনার দৃশ্য। এর পরই মাঝ রাস্তায় ক্যাব থামিয়ে টহলরত পুলিশকে তিনি সব জানা। পুলিশ ট্রলি ব্যাগের চেন খুলে দেখে ভিতরে রয়েছে মৃতদেহ।
মঙ্গলবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের ঘোলায় ব্যবসায়ীর ট্রলি বন্দি দেহ উদ্ধার হয়। সূত্রের খবর, ব্যবসার ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে অশান্তির কারণে খুন হতে হয় রাজস্থানের বাসিন্দা ভাগারাম সিংকে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তাঁর পরিচিত দুই ব্যবসায়ী কৃষ্ণপাল সিং ও করণ সিংকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু হাড়হিম করা এই ঘটনার পর্দা ওঠে ক্যাব চালকের বুদ্ধির জোরেই।
গিরিশ পার্ক থানা এলাকার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে ভাগারামকে খুন করা হয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। কফির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে অচৈতন্য করে এই খুন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার নলি কেটে ভাগারামকে খুন করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত উঠে আসছে। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। এর পর রক্তাক্ত ভাগারামকে ঘরে রেখে কৃষ্ণপাল ও করণ দিনভর বড়বাজারে কাজও করেন বলে প্রাথমিক জেরায় উঠে এসেছে বলে খবর।
প্রথমে ট্রলি ব্যাগে ভরে দেহ আনা হয় নাগেরবাজারে। সেখান থেকে অ্যাপ ক্যাব ভাড়া করে ঘোলা নিয়ে যাওয়া হয়। পরিকল্পনা ছিল দেহ লোপাট করা হবে। অ্যাপ চালক রাহুল অধিকারী যদি তৎপর না হতেন, তা হলে হয়ত ওই দেহ লোপাটও হয়ে যেতে পারত।
রাহুল অধিকারী জানান, নাগেরবাজার থেকে বুকিং করা হয়েছিল গাড়িটি। দুই যুবক একটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। লোকেশনে ক্যাব পৌঁছতেই তাঁরা গাড়ির ডিকি খুলে দিতে বলেন। ওই ট্রলি এতটাই ভারী ছিল যে , ওই দুই যুবক মিলেও তা নামাতে পারছিলেন না।
রাহুলের কথায়, ‘আমি ওঁদের জিজ্ঞাসা করি, এত ভারী লাগেজে কী আছে? তাঁরা বলেন, এখানে আমাদের ফ্যাক্টরি আছে। সেখান থেকে জিনিস বিক্রি করতে এনেছি। কিন্তু ওই ট্রলি দেখে আমার সন্দেহ হয়। মাথায় তখন মধ্যমগ্রামের ওই কেসটা ঘুরছে। মা-মেয়ে মিলে মহিলাকে মেরে ট্রলিতে ভরে গঙ্গায় ফেলতে গিয়েছিল। ঘোলার খেপলির বিলের কাছাকাছি এক জায়গায় হঠাৎ দেখি পুলিশের একটা ভ্যান। আমি হাত দেখিয়ে দাঁড় করাই। পুলিশ দেখে একজন পালানোরও চেষ্টা করে। আমি তাকে জাপটে ধরি। এর পরই পুলিশ ট্রলির চেন খুলে দেখে একজনের পা। পায়ে, মুখে ব্রাউন টেপ লাগানো।’
তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতরা জানিয়েছে টাকা নিয়ে অশান্তির কারণেই এই খুন। তবে নেপথ্যে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ভাগারাম, কৃষ্ণপাল, করণ সিং, সকলেই রাজস্থানের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে গিরিশ পার্কে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। করণ ও কৃষ্ণপালের থেকে চুড়িদারের পিস কিনতেন ব্যবসায়ী ভাগারাম। ধৃতদের দাবি, ৮ লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল ভাগারামের। দীর্ঘদিন ধরে টাকা চাইলেও দিচ্ছিলেন না। সেই টাকাকে কেন্দ্র করেই গোলমালের সূত্রপাত।
সেই কারণে গিরিশ পার্কের ভাড়া বাড়িতেই ভাগারামকে খুনের ছক কষেন অভিযুক্তরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে কফির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় ভাগারামকে অচৈতন্য হলে তাঁকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়, পরে নলি কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে ধৃতরা। খুনের পর গোটা দিন ব্যবসা করে করণ ও কৃষ্ণপাল। পরিকল্পনা ছিল রাতে দেহ পাচারের।