মোবাইলে টানা স্ক্রল করাই কাল! অবশ যুবতীর হাত, কোন অসুখের কথা জানালেন চিকিৎসকরা?
প্রতিদিন | ১২ মার্চ ২০২৫
অভিরূপ দাস: হাতে মারাত্মক ব্যাথা নিয়ে বছর চব্বিশের তরুণী এসেছে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে। নাড়াতে পারছেন না হাত। ধরতে পারছে না সামান্য পেনও। বার্ধক্যে আর্থারাইটিসে এমন ব্যাথা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু চব্বিশ বছর বয়সে! কোথাও চোট লেগেছিল? অভিভাবককে প্রশ্ন করে বিস্মিত চিকিৎসক। তরুণীর মায়ের কথায়, “চোট লাগেনি। সারাদিন ও মোবাইল স্ক্রল করে।” উত্তর শুনে দেরি করেননি চিকিৎসক। শুরু করেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শেষমেশ দেখা যায় সন্দেহই সত্যি।
শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. গার্গী নন্দী জানিয়েছেন, অত্যধিক মোবাইল স্ক্রল করে তরুণীর হাতে বাসা বেঁধেছে ‘ডেকুয়েরভেইনস টিনোসিনোভাইটিস’। আপাতত শহরের পেইনম্যানেজম্যান্ট চিকিৎসকদের চেম্বারে এমন অসুখ নিয়ে উপচে পড়ছে রোগী। সিংহভাগেরই বয়স পনেরো থেকে পঁচিশ।
চিকিৎসকের কথায়, “সারাদিন বুড়ো আঙুল দিয়ে মোবাইল স্ক্রল করে ক্রমাগত চাপ পড়ছে আঙুলের গোড়ায়। তাতেই বিপদ। এই বুড়ো আঙুলের গোড়ায় দুটো পেশির সংযোগস্থল। সেই সংযোগস্থলে চাপ পড়ে পড়ে প্রদাহ তৈরি হচ্ছে। অনেকটা আর্থারাইটিসের মতোই। আর্থারাইটিসে হাঁটুতে যেমন প্রদাহ হয় তেমনই প্রদাহ হচ্ছে বুড়ো আঙুলে।
বাঁচার উপায়? ছোটদের থেকে স্মার্টফোন একশো হাত দূরে রাখতে বলছেন চিকিৎসক। আর বড়দের জন্য নিদান? অনলাইন ক্লাস কিম্বা অফিসের কাজ বাদ দিলে দু’ঘণ্টার বেশি মোবাইল ঘাঁটা নয়। সকালে বিছানা ছাড়া থেকে রাতে শুতে যাওয়া পর্যন্ত, স্মার্টফোন ঘেঁটে চলেছে জেনারেশন জেড। ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, গড়ে দিনে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় স্মার্ট ফোনে বুঁদ থাকেন ভারতীয়রা।
শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের ডা.গার্গী নন্দী জানিয়েছেন, মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে আচমকা ব্যাথা শুরু বরফ দিয়ে সেঁক দিন ওই জায়গায়। বরফে যাঁদের কমে না, তাঁদের জন্য প্রয়োজন ব্যাথা কমানোর ওষুধ। দিতে হয় ‘থাম্ব স্প্লিন’। তাতেও না কমলে ইউএসজি দিয়ে ফ্লুইড জমছে যেখানে, সেখানে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিতে হয়।
চিকিৎসক ডা. গার্গী নন্দী জানিয়েছেন, দাতমাজা মুখ ধোয়ার মতোই জেন জেডের কাছে মোবাইল স্ক্রল করা নিত্য অভ্যাস। কেউ সারা দিন গেম খেলছে, কিম্বা মোবাইলে ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত সারাদিন। সে কারণেই জেনারেশন জেডের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে এই অসুখ। আজকাল মোবাইলে গেম খেলা এখন অনেকের পেশা, তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এমন অসুখ।