বাসুদেব ভট্টাচার্য, ময়নাগুড়ি
তখন পড়ন্ত বিকেল। পাটে না গেলেও সূয্যি তখন ঢোলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। দোমহনী থেকে জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির দিকে রাস্তা চলে গিয়েছে সোজা। গাড়িও ছুটছে। আর খানিক দূর গেলেই সেই রাস্তা মিশে যাবে ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কে। তারই মাঝে চোখ টেনে নেবে তিস্তার বাঁধ। সূর্যাস্ত। গাড়িও থামবে। ‘ওয়েক আপ সিড’ ছবির মতো মনও বলে উঠবে—‘তুম–ম্যায়...অউর দো কাপ চায়ে’।
ঠিক এই ইচ্ছেকে কাজে লাগিয়েই সেজে উঠেছে দোমহনীর তিস্তা বাঁধ। বাঁধজুড়ে রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট দোকান, ধোঁয়া ওঠা চা। সঙ্গে টা–ও। যেমন মোমো, চাউমিন ইত্যাদি। পরিবেশের সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন বুনছে ওরা। সেই সঙ্গে গড়ে উঠছে পর্যটনের সম্ভাবনাও। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনী গ্রামের প্রণবপল্লির একঘেঁয়ে ছবিটায় রঙের ছোঁয়া লেগেছে এলাকার তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে। একশোরও বেশি স্থানীয় তরুণ–তরুণীর চেষ্টায় তিস্তার বাঁধ লাগোয়া এই জায়গাটায় গড়ে উঠেছে একটি টি–হাব।
তাঁদের এই উদ্যোগে আরও উৎসাহ দিতে ও তিস্তার উপরের এই বাঁধকে আর একটু বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তরফে সেখানে বসানো হয়েছে ‘আই লভ দোমহনী’ ফলক। ফলে পথে গাড়ি থামিয়ে বেড়েছে ছবি বা সেল্ফি তোলার হিড়িক। আর তাতেই বাড়ছে লক্ষ্মীলাভের সম্ভাবনা। নতুন ব্যবসায়ীদের মধ্যে রাধিকা ছেত্রী, পরাণ দাস, শম্ভু মণ্ডলদের বক্তব্য, ফলকটি বসানোর পর থেকেই এখানে আসা মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। সকাল-সন্ধে, দু’বেলাতেই ভিড় করছেন তাঁরা। এর ফলে ব্যবসায় আরও অগ্রগতি হবে বলেই তাঁদের বিশ্বাস।
কিন্তু কিছু দিন আগেও সেখানে কিছুই ছিল না। ফাঁকা বাঁধ আর ওই গাছগুলি ছাড়া। হঠাৎ–ই স্থানীয় কয়েকজনের নজরে পড়ে, দোমহনীর এই বাঁধের ধারে কেউ কেউ প্রাকৃতিক শোভার টানে সেখানে আসেন বটে, কিন্তু তার পরেই একটু চা–স্ন্যাক্স খেতে তাঁরা দোমহনী বাজার নয়তো জলপাইগুড়ির দিকের রাস্তা ধরেন। যা দেখে তঁাদের মাথায় খেলে যায়, এখানেই যদি তৈরি করা যায় একটি টি–হাব! যেমন ভাবনা তেমন কাজ। বছর দু’য়েক আগে বাঁধের উপর কয়েকটি চায়ের দোকান শুরু করেন তাঁরা।
সেই সঙ্গে মোমো, চাউমিন, রোলের মতো ফাস্টফুডও। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ভিড়। ব্যবসাও জমতে শুরু করে। তাঁদের দেখাদেখি সেখানকার আরও অনেক ছেলেমেয়েরা একই ভাবে দোকান দিতে শুরু করে। ব্যাস, লেগে যায় জ্যাকপট। শহরের কোলাহল থেকে খানিক দূরে শান্ত নিরিবিলি উপভোগ করতে এখন সেখানে সবচেয়ে বেশি ভিড় স্কুল–কলেজ পড়ুয়াদের। সঙ্গে চলতে থাকে চায়ে–পে–চর্চা।
চা–টা ছাড়াও বেশ কয়েকটি খাবারের হোটেলও গড়ে উঠেছে সেখানে। এই মূহূর্তে ওই বাঁধের উপর ৫০-৬০টির মতো দোকান রয়েছে। সেখানে ব্যবসা করেন দেড়শোরও বেশি স্থানীয় ছেলেমেয়ে। ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুমুদরঞ্জন রায়ের কথায়, ‘এই এলাকায় এখন প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসেন। স্থানীয় তরুণ–তরুণীদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। পথচলতি মানুষের কাছে জায়গাটি আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে আজকালকার ট্রেন্ড মেনে সেখানে একটি ‘আই লভ দোমহনী’ ফলকও বসানো হয়ছে।’ চলতি মাসের ১২ তারিখ সেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে বলেও জানালেন তিনি।