দোলে মাছ-মাংস না খাওয়ার ফতোয়া নবদ্বীপের পুরপ্রধানের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৩ মার্চ ২০২৫
দোলে মাছ মাংস খাওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন নবদ্বীপের এক তৃণমূল নেতা। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। যে দলের সর্বোচ্চ নেত্রী নিজে সম্পূর্ণ সংস্কার মুক্ত। তাঁর দলের নেতার এই আবেদন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দলের এক পুরপ্রধান দোলপূর্ণিমায় মাছ-মাংস না খাওয়ার ‘অনুরোধ’ করেছেন এলাকাবাসীকে! তিনি এ-ও বলেছেন, ‘আমরা তো আর আইন প্রণয়ন করতে পারি না। তাই এই আবেদনকেই আইন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।’
সম্প্রতি দোল উৎসবের প্রস্তুতিতে নবদ্বীপ পুরসভার তরফে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। ওই বৈঠকে বৈষ্ণব মঠের প্রধান, বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই নবদ্বীপবাসীর উদ্দেশে দোলে মাছ-মাংস না খাওয়ার ‘আবেদন’ করেন পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে পুরপ্রধানকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি কোনও ধর্মকে ছোট করছি না। আমাদের হিন্দুধর্মে বিভিন্ন উৎসবে আমরা নিরামিষ খেয়ে থাকি। এটা চৈতন্যদেবের আবির্ভাব তিথি। এই তিথিতে এখানে চৈতন্যদেবের লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসেন। তাঁরা অধিকাংশই নিরামিষভোজী। তাঁরা এসে এই দৃশ্যদূষণ দেখবেন। দেখবেন কেউ রাস্তার এ ধারে খাসি খাচ্ছেন, কেউ ও ধারে মুরগি খাচ্ছেন! এটা তাঁদের পক্ষে অসহনীয়। সেটা মাথায় রেখেই নবদ্বীপবাসীর কাছে পুরসভার পক্ষ থেকে আমাদের আবেদন, আগামী ১৩, ১৪ এবং ১৫ মার্চ আপনারা আমিষ ত্যাগ করে নিরামিষ খান।’
প্রসঙ্গত অতীতে একবার নবরাত্রি বা শ্রাবণ মাসে মাছ-মাংস খাওয়াকে ‘মোগলদের মানসিকতা’ বলে এক বার উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন আধুনিকমনস্ক তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি ছিল, বিজেপি নানা ভাবে খাওয়া-পরার মৌলিক অধিকারের উপর নিজেদের মত চাপিয়ে দিতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘মোদী এখন বলে বেড়াচ্ছেন মাছ খাবেন না, মাংস খাবেন না, ডিম খাবেন না। তা হলে কি ব্যাঙের ছাতা খাবে? আপনি জোগাড় করে দিন। যার যা ইচ্ছা, খাবে। যে নিরামিষ ভালবাসে, সে নিরামিষ খাবে। যে আমিষ খায়, সে তা-ই খাবে। এ দেশ আমাদের সকলের। নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান।’
শুধু তাই নয়, মোদীকে নিজের হাতে মাছ রেঁধে খাওয়ানোর কথাও বলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রমো। তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ বিরিয়ানি ভালবাসে, কেউ চিংড়ি পটল ভালবাসে, কেউ চিংড়ির মালাইকারি ভালবাসে। মোদীবাবু, আপনি খেয়ে একটু দেখুন না স্বাদটা কেমন? খেয়ে দেখবেন? তৈরি করে দেব? কথা দিচ্ছি, কাউকে দিয়ে করাব না, নিজে রান্না করব।’