কাহিনিটা আমেরিকান লেখক পিটার ব্রাডফোর্ড বেন্চলে–র। যা থেকে ছবি তৈরি করেছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। জজ়। সেখানে ছিল মানুষখেকো ‘গ্রেট হোয়াইট শার্ক’। আর ব্যান্ডেলের কাছে রবিবার হুগলি নদীতে বহু বিশেষজ্ঞকে চমকে দিয়ে যে হাঙর ধরা পড়ল বিজ্ঞানীদের জালে, তারও পেট সাদা, তবে পিঠ ধূসর।
পিঠের উপরের পাখনাটা বেশ বড়। যাঁরা ‘জজ়’ দেখেছেন, ওই পাখনা চিনতে তাঁদের ভুল হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেলুলয়েডের পর্দার সেই গ্রেট হোয়াইট শার্ক নয়, এটা বুল শার্ক। আকারে গ্রেট হোয়াইট শার্কের তুলনায় অনেক ছোট হলেও বুল শার্ক স্বভাবগত ভাবেই আগ্রাসী। এর আগে ভারতের ইনল্যান্ড ওয়াটার বা নদীপথের এতটা ভিতরে এই প্রজাতির হাঙরের সন্ধান মেলেনি।
ব্যান্ডেলের কাছে ওই জায়গায় হুগলি নদী প্রায় ৪৫০ মিটার চওড়া। সকালের দিকে অন্তত এক ডজন মাছধরা নৌকো থেকে ১৬টা জাল পড়েছিল নদীতে। গত রবিবার, ৯ মার্চ সকালে সেই সময়ে যাত্রী নিয়ে নদী পারাপার করছিল ৮টা নৌকো। একই সময়ে নমুনা সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত বিজ্ঞানীদের নৌকোর জালে ধরা পড়ল সেই হাঙর।
শক্তপোক্ত গড়ন, নাকটা বাড়তে গিয়েও যেন পুরো বাড়তে পারেনি — মাঝপথে থমকে গিয়েছে। হুগলির চাঁদনী ঘাটে প্রাণিবিজ্ঞানীরা দেখা পেলেন বুল শার্কের। প্রাণিবজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পুরুষের তুলনায় বুল শার্কের স্ত্রী প্রজাতি আকারে কিছুটা বড় হয়। পূর্ণবয়স্ক একটি স্ত্রী হাঙরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ধরা পড়া হাঙরটি পুরুষ না স্ত্রী, সেটা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
যে জায়গায় ওই হাঙর ধরা পড়েছে, সেখানে গঙ্গার ঘাটে ভিড় লেগেই থাকে। স্নান করতে নামা কেউ যদি আবিষ্কার করতেন, তাঁর পাশেই সাঁতরে বেড়াচ্ছে হাঙর, তা হলে! প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, হাঙর থাকে সমুদ্রে। হুগলি নদীতে তবে হাঙর এল কী করে? মেরিন বায়োলজিস্টদের মতে, এই প্রজাতির হাঙর সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে শুরু করে নদীর মিষ্টি জল, সব রকম জলেই স্বচ্ছন্দ। স্বভাবে পরিযায়ী।
অনুকূল পরিবেশের সন্ধানে তারা সমুদ্র থেকে নদী, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু তা বলে হুগলি নদীর মোহনা থেকে ১৮০ কিলোমিটার ভিতরে! ধন্দ কিন্তু কাটছে না প্রাণিবিজ্ঞানীদের। ইতিমধ্যেই ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অফ ওয়াইল্ডলাইফ সায়েন্স’–এ।
আইইউসিএন–এর তালিকায় বুল শার্ককে ‘অসুরক্ষিত’ বা ভালনারেবল প্রজাতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রজাতির হাঙরের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকার প্রধান কারণ, বেহিসেবি মাছধরা। মাছের সঙ্গে ধরা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে হাঙরও। ফলে অন্য প্রজাতির সঙ্গে বুল শার্কের সংখ্যাও কমছে।
পাশাপাশি, জলজ প্রাণীদের আচরণ বদলে যেতে শুরু করেছে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের দূষণে। এই নিয়ে ইউনেস্কোর পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা ও পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, ‘পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি দূষণেই এমন সব অস্বাভাবিক কাণ্ড।’