• ‘ভুয়ো পরিচয়’, অধীরের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক ধৃত
    আনন্দবাজার | ১৩ মার্চ ২০২৫
  • ছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর ব্যক্তিগত আপ্ত সহায়ক। তবে নাম ভাঁড়িয়ে, লোকসভার যুগ্ম সচিবের মিথ্যা পরিচয়ে পুলিশি-নিরাপত্তা চাওয়ার অভিযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থেকে প্রদীপ্ত রাজপণ্ডিত নামে এক যুবককে ধরেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জাল শংসাপত্র, জাল নথি তৈরিরও অভিযোগ রয়েছে।

    সুতাহাটার চৈতন্যপুরের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার প্রদীপ্ত গ্রেফতার হন। ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে পুলিশ। প্রদীপ্তের ব্যবহৃত নীল বাতি লাগানো গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বুধবার হলদিয়া মহকুমা কোর্টে ধৃতের ১২ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়। এসডিপিও (হলদিয়া) অরিন্দম অধিকারী বলেন, “ধৃতের মিথ্যার জাল কতটা ছড়ানো, সেই সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা হচ্ছে। কাউকে প্রতারণা করেছেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।”

    সাংসদেরা নিজেদের আপ্ত সহায়ক বাছেন। অধীরের দাবি, “ব্যক্তিগত আপ্ত সহায়কের পদের অধিকার দেয় সংসদ। সংসদ তাঁর বেতন দেয়। আমার সাংসদ পদ যাওয়ার পরে, তিনি সংসদের কর্মী।” তবে বিধি অনুযায়ী, অধীর যে হেতু সাংসদ নন, তাঁর আপ্ত সহায়কও সংসদের কর্মী নন। অধীর মেনেছেন, “আমার সঙ্গে ওঁর চেনা-জানা আছে। এত দিন আমার হয়ে কাজ করেছেন।”

    সুতাহাটার চৈতন্যপুরে প্রদীপ্তদের আদি বাড়ি। এখন নয়াদিল্লিতে থাকেন। তাঁর বাবা সেখানে মন্দিরের পুরোহিত। প্রদীপ্তর পড়াশোনা দিল্লিতে। অধীর রেল প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন প্রদীপ্ত তাঁর ব্যক্তিগত আপ্ত সহায়ক হন। অধীর যখন ‘পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি’র চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করতেন। গত লোকসভা ভোটে হেরে অধীর সাংসদ না থাকলেও, দিল্লিতে তাঁর সহযোগীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন প্রদীপ্ত। অধীরের ব্যক্তিগত ‘ওয়টস্যাপ গ্রুপ’-এ প্রদীপ্ত অন্যতম ‘অ্যাডমিন’। সম্প্রতি ঘনিষ্ঠ মহলে প্রদীপ্ত দাবি করছিলেন, তিনি লোকসভায় ‘রিসার্চ অফিসার’ পদে চাকরি পেয়েছেন।

    পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রদীপ্ত নাম ভাঁড়িয়ে, ভুয়ো পরিচয় দিতেন। মাস খানেক এক গুড় ব্যবসায়ীর থেকে দু’কেজি গুড় ‘ঘুষ’ নেওয়া বা স্থানীয় অটো-টোটোর চালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বিবাদেও তিনি মিথ্যা পরিচয় দেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সুতাহাটায় প্রদীপ্তদের নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানে যান প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। প্রদীপ্তের গ্রেফতারি নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। নিশীথ-‘ঘনিষ্ঠ’ বিজেপির কোচবিহারের এক নেতা বলেন, “দাদা (নিশীথ) সুতাহাটায় দলীয় কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রদীপ্তর বাড়িতে যান। অধীর চৌধুরীর আপ্ত সহায়ক ছিলেন বলে প্রদীপ্তের সঙ্গে অনেকের পরিচয় আছে।”

    আদালতে সরকারি আইনজীবী ভি কে রাম দাবি করেন, “অভিযুক্ত নিজেকে লোকসভার সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব পরিচয় দিয়ে পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে এসপি, ডিআইবি-কে বার্তা পাঠান। এক আধিকারিকের সইও জাল করেছেন।” প্রদীপ্তের আইনজীবী গোপালচন্দ্র দাসের পাল্টা দাবি, “অধীর চৌধুরী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এবং পরেও প্রদীপ্ত তাঁর পিএ ছিলেন। অভিযোগ যে ভিত্তিহীন, তা তদন্তে পরিষ্কার হবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)