• এক ঘণ্টা ধরে গানের অর্থ বুঝেছিল, গাওয়ার সময়ে শ্রেয়ার চোখ বেয়ে নেমেছিল জলের ধারা
    আনন্দবাজার | ১৩ মার্চ ২০২৫
  • আজ শ্রেয়ার জন্মদিন। গায়িকা বা শিল্পী শ্রেয়া ঘোষালকে আমরা সকলেই চিনি। মানুষও শিল্পী শ্রেয়ার মূল্যায়ন করেছেন, আগামী দিনে আরও করবেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রতিভার জোরেই শ্রেয়া এত দূর এসেছে। ভবিষ্যতেও আরও দূর এগিয়ে যাবে, এ নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। এই নক্ষত্র শ্রেয়া ঘোষালের আড়ালে থাকা ব্যক্তি শ্রেয়াকেও চিনি। মাটিতে পা রেখে চলা সেই মানুষটি আমার কাছে শিল্পী শ্রেয়ার থেকে কম প্রিয় নয়। সামান্য খ্যাতি, প্রতিপত্তি ও যশ মানুষকে বদলে দিতে সময় নেয় না। শ্রেয়ার তো এই তিনটি বিষয়েরই কোনও সীমা-পরিসীমা নেই।

    শ্রেয়া বরাবরই ঘরোয়া, বন্ধুবৎসল, ভালবাসাপ্রবণ মানুষ। এত খ্যাতি বা যশ পাওয়ার পরেও সেগুলি বদলে যায়নি। এটা শিক্ষণীয় গুণ। আমরা সবাই এটা শিখে উঠতে পারি না। জয় সরকারের মাধ্যমে শ্রেয়ার সঙ্গে আমার কাজ শুরু। ‘মন কেমনের স্টেশন’ অ্যলবামেই আমাদের প্রথম কাজ। তবে ছবিতে আমার লেখা ও ওর গাওয়া প্রথম গান ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন’। এত দিনে শ্রেয়ার সঙ্গে বহু স্মৃতি তৈরি হয়েছে। ও আশপাশে থাকলে কেউ গম্ভীর মুখে থাকতে পারে না। ওর কার্যকলাপ সারা ক্ষণই সকলকে প্রবল হাসিঠাট্টার মধ্যে রাখে। তবে হাসিঠাট্টা, দুষ্টুমি, খুনসুটির ঠিক পরেই কোনও গান গাইলে আবহ বদলে যায় মুহূর্তে। গান ধরার সঙ্গে সঙ্গে ওই খুনসুটি করা মানুষটাও বদলে যায়। মানুষ থেকে শিল্পী, আবার শিল্পী থেকে মানুষের সত্তায় যাতায়াত করা মোটেও সহজ নয়। ও সেটা অনায়াসে করতে পারে।

    শ্রেয়ার একটা গোপন প্রতিভা রয়েছে। ও কিন্তু মানুষকে অসাধারণ নকল করতে পারে। হাসিখুশি থাকতেই ও পছন্দ করে। মনে আছে, একবার একটি অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতায় এসেছিল শ্রেয়া। তার কয়েক দিন আগেই আমার জন্মদিন ছিল। সেই বারই এক দিন জয় আর লোপামুদ্রা (মিত্র) ফোন করে আমাকে আর দূর্বাকে ওদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাল। শ্রেয়া, শ্রীকান্তদা, আর বিশ্বজিৎকাকুরও (শ্রেয়া ঘোষালের বাবা) সেই দিন আসার কথা। আমরা গেলাম, গানবাজনা করলাম। হঠাৎ দেখলাম সবাই বাইরের ঘরে চলে গেল। কিছু ক্ষণ পরে শ্রেয়া ডাকল। আমি গিয়ে দেখি, আমার জন্মদিন উপলক্ষে বিরাট একটা কেক আনা হয়েছে। জয়-লোপা ও শ্রেয়াই আমার জন্মদিনের বিলম্বিত উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা করে। রাত ১২টায় কেকটা কাটা হয়েছিল।

    শিল্পী শ্রেয়ার বিষয় লিখতে গেলে শেষ হবে না। একজন শিল্পীর এই জায়গায় পৌঁছোনোর নেপথ্যে প্রবল অধ্যবসায় থাকে। এখনও দেখি, যে কোনও গানের অর্থ আগে ভাল করে মন দিয়ে বোঝে ও। কোনও পঙ্‌ক্তি বুঝতে না পারলে, জানতে চায়। তার পরে ও গানটা গায়। ‘মানবজমিনে’ রামপ্রসাদের ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’ শ্রেয়াকে দিয়ে গাইয়েছিলাম অরিজিতের পাশাপাশি। স্টুডিয়োয় দীর্ঘ এক ঘণ্টা বসে গানটার মানে বুঝতে চেয়েছিল। আমার সীমিত সাধ্যে যতটুকু সম্ভব বুঝিয়েছিলাম। তার পরে গানটা গাওয়ার সময়ে ওর দু’চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে এসেছিল। শিল্পকে বোঝার তাগিদই শিল্পীকে বড় করে। এই গুণ শ্রেয়ার মধ্যে পুরো মাত্রায় রয়েছে। আজ জন্মদিনে ওকে এটাই বলব, ভাল থাকুক। অগণিত মানুষকে গানের মাধ্যমে আনন্দ দিয়ে আসছে। এর চেয়ে বড় কাজ আর হয় না। ওর চেয়ে আমি কেবল বয়সেই বড়। সেই সূত্রে ওকে অনেক ভালবাসা ও স্নেহ। শ্রেয়া খাদ্যরসিক। আমি নিশ্চিত, আজ ভাল রান্না হয়েছে ওর বাড়িতে। আজ সকলকে নিয়ে ও আনন্দ করুক। সেই আনন্দ যেন ও সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)