এই সময়, কালনা: বারবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে পালিয়ে যাওয়া রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছে বাসুদেব মণ্ডল। হুগলির বলাগরের বাসিন্দা বাসুদেবকে এমনিতে আলাদা করে চেনার উপায় নেই। কিন্তু, পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়ার সবরকমের কৌশল তার আয়ত্তে। এ ক্ষেত্রে তাকে বিশেষজ্ঞই বলা যায়।
একবার বারাসত থানার পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়েছিল বাসুদেব। পরে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত বাসুদেব মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছিল কালনা থানার পুলিশ। কিন্তু, কালনা মহকুমা আদালতের এজলাসের সামনে থেকে পুলিশের চোখে ধুলে দিয়ে ফের পালিয়ে গিয়েছিল সে।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে ফেরার ছিল বাসুদেব। এর পরে গত ১০ মার্চ বাসুদেবকে গ্রেপ্তার করে হুগলির শেওড়াফুলি জিআরপি। বুধবার সেখান থেকে তাকে কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক বাসুদেবের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
তবে এ দিন আর কোনও ফাঁক রাখেনি পুলিশ। তাকে পুলিশ লক–আপের ভিতরেও হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়। আদালতে পেশ করার সময়েও তাকে ঘিরে ছিল বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। বাসুদেবকে নিয়ে এ দিন আদালতে অনেকের মুখেই শোলের গব্বর সিংয়ের জেল পালানোর দৃশ্যের উল্লেখ করতে শোনা যায়। ধরা পরার পর গব্বরের সংলাপ ছিল, দুনিয়ার এমন কোনও জেল নেই যে তাকে আটকে রাখে। এ দিন লক–আপের ভিতর থেকে গব্বর সিংয়ের ঢঙেই তাকে বলতে শোনা যায়, ‘মুক্তি পেতে আমার স্রেফ ১৫ দিন লাগবে। তার মধ্যেই বেরিয়ে যাব।’
হুগলির বলাগড় থানা এলাকার বাসিন্দা বাসুদেব মণ্ডলের বিরুদ্ধে পূর্ব বর্ধমানের রায়না, বর্ধমান, শক্তিগড়, জামালপুর, কালনায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে হুগলির পান্ডুয়া, উত্তর ২৪ পরগনার নিউ টাউন, বাগুইআটিতেও। কালনা থানার পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর মাস দুয়েক আগে বারাসত থানার পুলিস একটি মামলায় তাকে বর্ধমানে নিয়ে আসছিল। সেই সময়ে পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে গিয়েছিল বাসুদেব।
কালনা থেকে কী ভাবে পালিয়েছিল বাসুদেব?
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে কালনা থানার পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র সমেত গ্রেপ্তার করেছিল তাকে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন সমেত বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করে পর দিন ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করায় পুলিশ। ওই দিন দুপুর দুটোর আগে তাকে পুলিশ লক–আপ থেকে এনে এসিজেএম আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল। অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে তাকে এজলাসে নিয়ে যাওয়ার সময়ে পুলিশের এক মুহূর্তের অসতর্কতায় সে বাইরে বেরিয়ে আসে। এজলাসের সামনে অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজনের ভিড় ছিল। কোনও তাড়াহুড়ো না করে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধীরে সুস্থে হেঁটে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে।
এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের সেই ঘটনা খুলে বলে বাসুদেব। কী ভাবে পালিয়েছিল তার বিবরণ দিয়ে বাসুদেব বলে, ‘ওই দিন দড়ি খুলে চলে গিয়েছিলাম। হেঁটে ট্রেন ধরে বাড়িতে যাই। তার পর দিঘায় ছিলাম। সেখানে কাজ করছিলাম।’ তা হলে ফের অপরাধে নাম লেখাল কেন? বাসুদেব বলে, ‘সবই নিয়তি। সবই আপনা আপনি হয়ে যায়।’