সঞ্জয় দে ও মোহিত দাস, বড়জোড়া
জলাশয়ে নেমে শুঁড়ের মধ্যে জল ভরে শাবকদের স্নান করিয়ে দিচ্ছে মা হাতির দল। আবার কখনও একটি শাবক আর একটি শাবককে শুঁড়ে ঠেলে মাটিতে ফেলে দিচ্ছে। তাই দেখে কোনও শাবক নিজেই মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি দিচ্ছে। সবই ভারি মজার দৃশ্য। বাঁকুড়া জেলার উত্তর বন বিভাগের বড়জোড়া রেঞ্জের পাবয়ার জঙ্গলে বুনো হাতি ও শাবকদের এমন মজার দৃশ্য দেখার কথা লোকমুখে রটে গিয়েছিল।
তাই হাতি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছিলেন আশপাশের বাসিন্দারা। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, প্রত্যেকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিলেন হাতিদের খুনসুটির নানা দৃশ্য। অনেকে আবার মোবাইল বন্দি করে রাখছিলেন। কিন্তু এ বার হাতি দেখায় রাশ টানল বন দপ্তর। কোনওরকম দুর্ঘটনা এড়াতে পাবয়া জঙ্গলের বিভিন্ন প্রবেশপথ বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হলো।
বড়জোড়া শুধু নয়, দুর্গাপুর, গঙ্গাজলঘাঁটি সমেত বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসছিলেন হাতি দেখতে। বন দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না-করে বাইক ও গাড়ি নিয়ে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিলেন অনেকে। হাতি দেখতে এসে কেউ কেউ তারের ফেনসিংয়ের কাছে চলে যাচ্ছিলেন।
যে কোনও সময়ে বুনো হাতি আক্রমণ করলে ভয়ানক বিপদের আশঙ্কা থাকবে। নিষেধ করেও কাজ হচ্ছিল না। তাই হাতি দেখা বন্ধ করতে জঙ্গলের প্রবেশপথ পাবয়া, কালাইপানি, খাঁড়ারি ও বাঁধকানা— এই চার জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দিল বন দপ্তর।
বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের অতিরিক্ত বনাধিকারিক দুর্গাকান্তি ঝা বলেন, ‘বুনো হাতির দল জঙ্গলে আছে। সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ জঙ্গলে ঢুকে যাচ্ছিল। ক্রমশ ভিড় বাড়ছে। যে কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে। তাই চারদিকে বাঁশের গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে তার জন্য সতর্ক রয়েছেন বনকর্মীরা। প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।’
রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার খবর জানা ছিল না কারও। ফলে মঙ্গল–বুধবার হাতি দেখতে এসে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন অনেকে। হাট আশুড়িয়া থেকে হাতি দেখতে এসেছিলেন কোয়েল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘হাতি দেখতে এসেছিলাম। জঙ্গলের ভিতরে ঢুকতে পারলাম না। রাস্তা বন্ধ।’ একই অভিজ্ঞতা হয়েছে ফুলবেড়িয়ার বাসিন্দা উমা সিংহের। বাচ্চাদের নিয়ে এসেছিলেন হাতি দেখতে। উমা বলেন, ‘এখন থেকে আর জঙ্গলে ঢোকা যাবে না বলছেন বন দপ্তরের কর্মীরা। গেট লাগিয়ে দিয়েছে। হাতি দেখা হলো না।’
প্রায় তি মাস ধরে পাবয়া জঙ্গলে রয়েছে ৬৫ থেকে ৬৮টি হাতি। বেশ কিছু হস্তিশাবকও রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার, জলের উপযুক্ত পরিবেশ থাকায় হাতির দল এই জঙ্গলে রয়ে গিয়েছে। প্রথমে মানুষকে জঙ্গলের ধারে ঘেঁষতে দেওয়া হতো না। পরে স্থানীয়রা হাতি দেখার আবদার জানাতেন বনকর্মীদের কাছে। দূর থেকে হাতি দেখে চলে যেতেন তাঁরা। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে। তার পরেই প্রমাদ গোনেন বনকর্তারা। বড়সড় বিপর্যয় রুখতে জঙ্গলে মানুষ ঢোকাই বন্ধ করে দেওয়া হলো।