• মনরেগায় বঙ্গের দু’বছরের বকেয়া মেটানোর সুপারিশ, স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে আশ্বস্ত নয় রাজ্য
    এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: একশো দিনের কাজের প্রকল্পে (মনরেগা) বাংলার বরাদ্দ আটকে রাখা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গত দু’বছর ধরেই সুর চড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূল। সংসদেও এই ইস্যুতে বারবার সরব হয়েছেন জোড়াফুলের সাংসদরা।

    এ বার গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ বিষয়ক সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি বাংলার বকেয়া দু’বছরের বরাদ্দ অবিলম্বে মেটানোর সুপারিশ করল। কংগ্রেস সাংসদ সপ্তগিরি শঙ্কর উলাকার নেতৃত্বাধীন স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘২০২২-২৩ অর্থবর্ষ থেকেই টানা তিন বছর পশ্চিমবঙ্গকে গ্রামোন্নয়নে প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একমাত্র চলতি আর্থিক বছরের প্রাপ্য টাকা নিয়ে আদালতে বিরোধ রয়েছে। কিন্তু তার আগের দু’বছরের বকেয়া টাকা এখনই মিটিয়ে দিতে হবে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে। এ নিয়ে কোনও রকম গড়িমসি চলবে না। দেখতে হবে, গ্রামীণ এলাকার মানুষ বিশেষ করে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উপভোক্তারা যেন অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না–হন।’

    স্ট্যান্ডিং কমিটির এই সুপারিশকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশ। কারণ, সংসদে একাধিক অধিবেশনে বাংলার তৃণমূল সাংসদরা যখন বকেয়া মেটানোর দাবি তুলেছেন, তখন পাল্টা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যের শাসকদল কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় করেছে বলে তোপ দেগেছেন নির্মলা সীতারামন থেকে শুরু করে অন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এই প্রেক্ষাপটে স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ মেনে কেন্দ্র বিগত দুই আর্থিক বছরে মনরেগা প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ বাংলাকে মেটাবে কি না, সে দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

    একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে কেন্দ্র বাংলার বকেয়া না–মেটানোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছেন। দিল্লিতে গিয়ে ধর্না দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি টাকা না–দেওয়ায় রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগেই প্রকল্পের কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু কাজের পরিসর কমে যাওয়ায় বাংলার গ্রামীণ এলাকার মানুষ চরম হতাশায় ভুগছেন। অনেকে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করেই স্ট্যান্ডিং কমিটি বাংলার দু’বছরের বরাদ্দ মেটানোর সুপারিশ করেছে।

    এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছে ঠিকই। কিন্তু তা নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত নই। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার আইন, যুক্তি ও বাস্তব পরিস্থিতি মেনে চলে না। তাই আগে রাজ্যকে প্রাপ্য টাকা মেটাক কেন্দ্র। তারপরে সব কথা। না–আঁচালে বিশ্বাস করা যায় না।’

    তাঁর সংযোজন, ‘চলতি আর্থিক বছরের জন্য একশো দিনের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে রাজ্যে কত শ্রম দিবস তৈরি হবে, তার অনুমোদনই দেয়নি কেন্দ্র। বছর শেষ হতে চলল। টাকা দেবে কী করে?গ্রামের গরিব মানুষকে এই বঞ্চনার দায় কে নেবে?’ রাজ্যসভায় বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

    স্ট্যান্ডিং কমিটি মনরেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোরও সুপারিশ করেছে। অথচ গত আর্থিক বছর থেকেই এই প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এই প্রকল্পে মজুরিও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সর্বশেষ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা অনুযায়ী, মনরেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ১৬২৭ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা খরচই করতে পারেনি কেন্দ্র। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার ১৫ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়নি। একশো দিনের কাজে বাংলার পাওনা রয়েছে ৫৬২৮ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। বকেয়া পাওনার নিরিখে এটাই সর্বোচ্চ।

  • Link to this news (এই সময়)