• আজও ‘ত্রাতা’ বিদ্যাসাগর, সিলেবাসের বাইরেও তাঁর গল্প পড়ানোর সিদ্ধান্ত স্কুলে
    এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৫
  • সুমন ঘোষ, খড়্গপুর

    এআই–নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির যুগে আজকের প্রজন্ম বিদ্যাসাগর সম্পর্কে কতখানি জানে, তা নিয়ে অধিকাংশ বাবা–মা যে সন্দিহান, তা হলফ করেই বলা যায়। রক্ষণশীল সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে যে ভাবে তিনি বাল্যবিবাহ রুখে, নারী শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন, সেই লড়াইয়ের কাহিনি তাই এ বার স্কুলেও পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। তবে সিলেবাসের বাইরে।

    ঠিক হয়েছে, বিদ্যাসাগরকে নতুন করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের আঙিনায় আনতে প্রকাশ করা হবে পুস্তিকা। প্রার্থনার পরে বা ক্লাসের ফাঁকে ছাত্রছাত্রীদের সেই পুস্তিকা পড়ে শোনাবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাই।

    বিদ্যাসাগরের সেই কীর্তির দেড় শতক পরে এখনও তাঁর জন্মভূমি পশ্চিম মেদিনীপুরে বাল্যবিবাহ বা নাবালিকা বিয়ে একটা জ্বলন্ত সমস্যা। জেলার ২১টি ব্লকের মধ্যে দাঁতন-১, ২, কেশিয়াড়ি, কেশপুর, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, পিংলা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর-১ ব্লকের একাধিক জায়গায় নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়।

    এর ফলে ১৮ বছরের আগে নাবালিকাও হয়ে উঠছে সন্তানের মা। তৈরি হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। রাজ্য সরকারের তরফে কন্যাশ্রী-রূপশ্রী চালু করেও নাবালিকা বিয়ে সম্পূর্ণ রোখা যায়নি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নাবালিকার বিয়ে আটকানোর ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ–সংস্কারক বিদ্যাসাগরকেই ‘ত্রাতা’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে জেলার শিক্ষা মহল।

    স্থির হয়েছে, নারী শিক্ষা, বাল্যবিবাহ রোধ ও বিধবা বিবাহ প্রচলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা নিয়ে লেখা হবে পুস্তিকা। বিদ্যাসাগরকে নিয়ে গবেষণায় যুক্ত ২০০ জনের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত হবে সেই পুস্তিকার বিষয়বস্তু। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেন, জেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে যে প্রায় সাড়ে চার হাজার স্কুল রয়েছে, সেখানে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসানো হবে।

    সেই কাজ চলছে। শ্যামপদ বুধবার বলেন, ‘প্রায় ৭০ শতাংশের মতো স্কুলে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসানো হয়েছে। তা নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি আল কাদরীর সঙ্গে আলোচনার সময়ে উনিই বিদ্যাসাগরের জীবনবোধ ও সংগ্রামের কথা ছাত্রছাত্রীদের কাছে আরও বেশি করে তুলে ধরার প্রস্তাব দেন। তারপরই আমরা স্থায়ী সমিতিতে পুস্তিকা রচনার সিদ্ধান্ত নিই।’

    তাঁর কথায়, ‘নারী শিক্ষার প্রচলন, বাল্যবিবাহ রোধ এবং বিধবা বিবাহ প্রচলনে বিদ্যাসাগরের লড়াইয়ের কাহিনি যদি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের গল্পের ছলে বোঝানো যায়, বাল্যবিবাহ বন্ধে সেটি বড় ভূমিকা নেবে বলেই আমাদের আশা। পুস্তিকাটি প্রকাশের পরে প্রতিটি স্কুলেই তা পাঠানো হবে। শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের তা পড়ে শোনাবেন এবং বোঝাবেন।’

    জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান অনিমেষ দে–র কথায়, ‘ভীষণ ভালো উদ্যোগ। পড়ুয়াদের কাছে প্রতিদিন বিদ্যাসাগরের কথা শোনানো হলে তাদের মনে প্রভাব পড়তে বাধ্য। যা সমাজ জীবনে চলার পথে তাদের সাহায্য করবে।’ অনেক স্কুল শিক্ষকও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। প্রশ্ন হল, সব স্কুলের শিক্ষকেরা কি সিলেবাসের বাইরে বেরিয়ে পুস্তিকাটি পড়াবেন? শ্যামপদ বলেন, ‘শিক্ষকদের কাছে ছাত্রছাত্রীরা সন্তানসম। শিক্ষকদের কাছে পুস্তিকাটি পড়ানোর অনুরোধ রাখব। আশা করি, ছাত্রছাত্রীদের মঙ্গলের জন্য শিক্ষকেরা সেই দায়িত্ব পালন করবেন।’

  • Link to this news (এই সময়)