অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
বাংলায় অনার্স করেছেন বেলপাহাড়ির সরিষাবাসা গ্রামের বাসিন্দা শান্তনু মাহাতো। ইতিহাসে অনার্স বামুনডিহা গ্রামের বাসিন্দা ঊষারানি মাহাতো। বাংলায় অনার্সের পাশাপাশি হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করে বেশ কিছু দিন কাজ করেও করোনার সময়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন ভুলাভেদার বাসিন্দা সৌমেন মণ্ডল। চাকরি পাননি কেউই। ভেবেছিলেন গাইড হিসেবে পর্যটকদের ঝাড়গ্রাম চেনাবেন। নিজেরাও নিজেদের জেলাকে নতুন চোখে দেখবেন, শিখবেন, যাতে কাজটা ভালো ভাবে করা যায়। অন্তত একটা ভদ্রস্থ কেরিয়ার হিসেবে ভাবা যায়।
২০২২ সালের শুরুর দিক। তখনই ভাবনাটিকে রূপ দেওয়ার পথ তৈরি হয় ওঁদের সামনে। সৌজন্যে রাজ্য সরকারের ‘উৎকর্ষ বাংলা’। ট্যুর গাইড হিসেবে শান্তনু, ঊষারানি, সৌমেন-সহ ঝাড়গ্রামের মোট ৯০ জন যুবক-যুবতী ওই প্রকল্পের অধীনে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নাম নথিভুক্ত করেন।
প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল বেলপাহাড়ির ‘এসেন্সিভ এডুকেয়ার’ সংস্থা। সপ্তাহে ছ’দিন চার ঘণ্টা করে মোট ১৯২ ঘণ্টার অর্থাৎ দু'মাস ধরে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষায় ৮২ জন উত্তীর্ণ হন। তাঁদের হাতে ‘ট্যুর গাইড’-এর সরকার-স্বীকৃত শংসাপত্রও তুলে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ নেওয়া শান্তনু, ঊষারানি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রতিদিন উৎসাহ ভাতা হিসেবে ৫০ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও পর্যন্ত কেউ পাইনি। এমনকী, প্রশিক্ষণের শেষে রাজ্য পর্যটন দপ্তরের স্বীকৃত পরিচয়পত্রও আমরা পাইনি।’
উৎসাহ ভাতা যে ওঁরা পাননি তা স্বীকার করে নিয়ে বেলপাহাড়ির ওই সংস্থার কর্তা রবীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, ‘ট্যুর গাইডের যে প্রশিক্ষণ ৯০ জন নিয়েছিলেন, সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস উৎকর্ষ বাংলায় আপলোড করা হয়েছিল। এখনও তাঁরা উৎসাহ ভাতা পাননি। জেলার পর্যটন দপ্তর ও উৎকর্ষ বাংলা থেকে রাজ্য সরকারকে ই-মেলও করা হয়েছিল। ওই টাকা রাজ্য থেকে এখনও ছাড়া হয়নি।’
বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণ নেওয়া যুবক-যুবতী ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের কাছে এ সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন। তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। প্রশিক্ষণ নেওয়া অনেক গাইডেরই অভিযোগ, উৎসাহ ভাতা না পাওয়ার পাশাপাশি অনেকে পরিচয়পত্রটুকুও পাননি।
তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে কোন ভরসায় এই কাজ করবেন তাঁরা। তাই অনেকেই ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন ভিন্ রাজ্যে বা অন্য কাজ বেছে নিচ্ছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত ঝাড়গ্রামের পর্যটনে পর্যটক পরিষেবার এই ঘাটতিটা থেকেই যাচ্ছে। অনেকেই বেড়াতে এসে চাইলেও শিক্ষিত বা জেলা নিয়ে পড়াশোনা করা গাইড পাচ্ছেন না। স্রেফ আকর্ষণীয় জায়গাগুলো দেখেই ক্ষান্ত হতে হচ্ছে, এগুলোর ইতিহাস-ভূগোল কিছুই জানতে পারছেন না পর্যটকেরা।
বেলপাহাড়ির বিডিও সুমন ঘোষ বলেন, ‘যাঁরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁদের গত পুজোর আগে ব্লক থেকে পরিচয়পত্র, পর্যটনের জ্যাকেট, টুপি দেওয়া হয়েছে এবং পর্যটন দপ্তরের ওয়েবসাইটে ৩২ জনের নামও ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে আপলোড করা হয়েছে। যদি কেউ বাকি থাকেন, আমাদের নজরে আনলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’