• দোলে রঙিন হতে সোনালিদের সহায়তায় খাদি বোর্ড, শিল্প পর্ষদ
    এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, পুরুলিয়া: হাত বাড়ালেই বন্ধুর মতো বাড়িয়ে দেওয়া রঙের বাহার। এই বসন্তে লালমাটির জেলা পুরুলিয়ার প্রকৃতিও সেজে উঠেছে। জঙ্গলমহলের বলরামপুর ব্লকের ইচাডি গ্রামের একাধিক স্বনির্ভর দলের সদস্য পলাশ, নিম, বিট থেকে ভেষজ আবির তৈরিতে দিনরাত এক করে কাজ করছেন। এই আবির তৈরিতে স্বনির্ভর দলের ওই মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি বোর্ড ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ।

    পলাশ থেকে কমলা, নিম থেকে সবুজ ও বিটের নির্যাস থেকে গোলাপি আবির তৈরিতে ব্যস্ত বলরামপুর ব্লকের ইচাডি গ্রামের বিনীতা টুডু, পিয়ারি টুডু, সোনালি টুডু, মমতা টুডু ও সোনালি টুডুরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রামের চৌহদ্দি পেরোলেই জঙ্গল। সেই জঙ্গলে এই ভেষজগুলি সহজলভ্য। বিনীতার কথায়, ‘জঙ্গল থেকে সংগৃহীত এই তিন ভেষজের নির্যাস (অ্যাকোয়া টেক্সচার) ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এই আবির।’

    পশ্চিমবঙ্গ খাদি বোর্ড ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের পুরুলিয়ার আধিকারিক পাপু মুখোপাধ্যায় জানান, ‘দোলে প্রাকৃতিক বা ভেষজ আবিরের চাহিদা বরাবরই থাকে। সে কথা মাথায় রেখে ইচাডি গ্রামের একাধিক স্বনির্ভর দলের ৩০ জন সদস্যকে এই আবির তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম আমরা। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কাঁচামাল কিনতেও আমরা তাঁদের সাহায্য করছি।’

    আবির তৈরিতে ব্যস্ত মহিলারা জানাচ্ছেন, গতবার প্রথম এই ভেষজ আবির তৈরির কাজ পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করেছিলেন তাঁরা। গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বার আরও বেশি পরিমাণে এই আবির তৈরি করছেন। পরেশ পাল নামে খাদি বোর্ডের এক কর্মীর কথায়, ‘গতবার এক কুইন্টালের মতো আবির বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের এই সদস্যারা তৈরি করেছিলেন। এ বার ইতিমধ্যে তা আড়াই গুণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আড়াই কুইন্টাল আবির ইতিমধ্যে কলকাতা সমেত বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। কলকাতার বিবাদি বাগে খাদি বোর্ডের বিপণন কেন্দ্রে এই আবির পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া মুর্শিদাবাদের এক্সপোতে চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কম আবির পাঠাতে পেরেছিলাম আমরা। দ্রুত তা শেষ হয়ে গিয়েছে।’

    ওই কর্মী আরও বলেন, ‘পুরুলিয়ায় দোলে প্রচুর পর্যটক আসেন। বিভিন্ন হোটেল, লজ বা অতিথি আবাসের তরফেও বরাত মিলেছে।’

    একই সঙ্গে পলাশ ফুল ব্যবহার করে মহিলাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে পুরুলিয়া কৃষি দপ্তর। পুরুলিয়া কৃষি ভবনে এমনই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বুধবার তার প্রথম দিনে যোগ দেন পুরুলিয়া ১ ব্লকের মহিলারা। এ প্রসঙ্গে ব্লক সহ কৃষি আধিকারিক তন্ময় সাহা বলেন, ‘প্রায় দেড়শো জন মহিলাকে পলাশ ফুল থেকে আবির তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

    কী ভাবে তৈরি হয় এই আবির?

    কর্মশালায় উপস্থিত লাগদা পঞ্চায়েতের সোনাইজুড়ির বাসিন্দা নিরূপা মাহাতো বলেন, ‘পলাশের ফুলকে প্রথমে মিক্সার গ্রাইন্ডারের সাহায্যে পেস্টের মতো তৈরি করতে হয়। তার পর সেটি ছেঁকে অ্যারারুটের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় পলাশের আবির। এর রং উজ্জ্বল। ত্বকে কোনও ক্ষতি করে না। পুরুলিয়ায আসা পর্যটকদের কাছে চাহিদা প্রচুর রয়েছে। তাই বাজার খুব ভালো।’ কৃষি দপ্তর বিপণনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

    পুরুলিয়া সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুব্রত রাহা জানাচ্ছেন, যা চকচক করে তাই চোখ টানে। বাজারে যে সমস্ত রাসায়নিক মিশ্রিত রং, আবির পাওয়া যায় তা চোখ টানলেও একাধিক ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। এই রং ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর। দোল খেলার পরে এই রং জলের সঙ্গে মিশে দূষণ তৈরি হতে পারে। মাটিতে মিশলেও একই ভাবে দূষণ হতে পারে। কেমন দামে বিক্রি হচ্ছএ এই আবির? পলাশ ও নিমের আবিরের দাম কেজি প্রতি সাড়ে তিনশো টাকা। আর বিট থেকে তৈরি গোলাপি আবিরের দাম কেজি প্রতি সাড়ে চারশো টাকা।

  • Link to this news (এই সময়)