• রঙের উৎসবে শবনম-খুশবুরা, মিনি ভারতে সম্প্রীতি
    এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৫
  • মহম্মদ মহসিন, বাউড়িয়া

    ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এই আপ্ত বাক্য মেনে এবারও রঙের উৎসবে সামিল হচ্ছে শবনম–আফসানারা।

    এক সময় পাট শিল্পের জন্য খুবই সুখ্যাতি ছিল হাওড়ার বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল, ফুলেশ্বর এলাকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এই তল্লাশে পাট শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। গঙ্গার ধার বরাবর তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকটি জুট মিল। তার সুবাদে বিভিন্ন ধর্ম এবং ভাষাভাষী মানুষ এখানে আস্তানা গেড়েছিলেন।

    জুট মিলের আশপাশে যে সব শ্রমিক বস্তি রয়েছে সেখানে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের বসবাস। তাই এটাকে অনেকে ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বলে থাকেন। সেখানেই রয়েছে পূর্ব বুড়িখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাউড়িয়া স্টেশনের অদূরে ডোমজুড় ফিডার রোডের পাশে এই স্কুলটিতে যারা এখন পড়াশোনা করে তাদের ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন, তারা সবাই একসঙ্গে রঙের উৎসবে সামিল হয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

    বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের স্কুলটা সংখ্যালঘু এলাকায় অবস্থিত হলেও এখানে সব ধর্মের ছেলে–মেয়ে পড়াশুনা করে। তাদের মাতৃভাষাও আলাদা। কিন্তু রঙের উৎসবে ওদের ধর্মীয় পরিচয়টা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। প্রতি বছরই সবাই একসঙ্গে বসন্ত উৎসবের আনন্দে গা ভাসায়। আমরা শিক্ষক–শিক্ষিরা যেমন তাদেরকে উৎসাহ দিই, অভিভাবকরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সব মিলিয়ে একটা মিলন উৎসবের চেহারা নেয়।’

    অন্যান্য বছরের মত এ বারও স্কুলের পক্ষ থেকে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। স্কুলে পড়ুয়ারা নিজের হাতে তৈরি করেছে ভেষজ আবির। শুকনো ফল ও ফুল দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো হয়েছে হলুদ, লাল, গোলাপি আবির। সেই আবিরের রঙে একে অপরকে রাঙিয়ে দেবে ওরা। সে জন্য অনেক দায়িত্ব এসে পড়েছে শবনম–আফসানাদের কাঁধে।

    প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জানা গেল, ভেষজ আবির তৈরির জন্য ছোট্ট শবনম ফল ও ফুল কেটে দিয়েছে। তাকে শুকনো করে নির্দিষ্ট পাত্রে তুলে রেখেছে তারই সহপাঠী রিমি দাস। এ ছাড়াও আবির তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যারারুট এবং বিভিন্ন রকমের আনাজের নির্যাস। রঙের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য ভেষজ রং (কেক তৈরিতে যে রং ব্যবহার করা হয়) ব্যবহার করা হচ্ছে।

    তা দিয়ে মোট ১০ রকমের আবির তৈরি করা হয়েছে। বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা নাচ, গান, নাটকে অংশ নেবে। বসন্ত উৎসবকে সফল করার জন্য একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শবনম কাজি, রীতেশ হরি, আফসানা খাতুন, মৃণাল সাউ, খুশবু দুলে, রিমি দাস, শেখ সাকিবুদ্দিন, রীনা খাতুনরা। এরা মূলত দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া। তাদের সাহায্য করছেন স্কুলের শিক্ষিকা সীমা মুখিয়া, দেবাঙ্কুর সরকার, সৌগত রানা, অপর্ণা মাইতি ও জয়দেব পালরা।

  • Link to this news (এই সময়)