দড়ি-ট্রলি কিনে চারদিন আগেই প্রস্তুতি! ঘোলা হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ ‘পরিকল্পিত’, দাবি পুলিশের
প্রতিদিন | ১৪ মার্চ ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাকপুর: ঘোলার ট্রলি কাণ্ডে ভাগরাম দিওয়াসিকে খুনের সময় একমাত্র কৃষ্ণপাল সিং নয়, তাঁর আত্মীয় করণ সিংও উপস্থিত ছিল। বুধবার মধ্য রাতে দুই ধৃতকে নিয়ে ঘটনাস্থল কলকাতার গিরিশ পার্কের মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের কৃষ্ণপালের বাড়িতে পুনর্নির্মাণে গিয়ে এমনটাই জানতে পেরেছে ঘোলা থানার পুলিশ। অভিযুক্তরা গ্রেপ্তারের পর খুনের সময় একমাত্র ধৃত কৃষ্ণপাল সিং ছিল বলেই জানিয়েছিল। কিন্তু এই বয়ানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গোড়াতেই খাটকা ছিল পুলিশের। যেভাবে তাঁরা মধ্যমগ্রামের ট্রলি কাণ্ডকে ফলো করে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাতে পূর্ব পরিকল্পনা বলেই অনুমান করেছিলেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে লাশ পাচারের জন্য নীল ট্রলি ও শ্বাসরোধ করতে নাইলনের দড়ি ঘটনার দিন চারেক আগে কেনা হয়েছিল। ফলে ঘোলার ট্রলি কাণ্ড যে ‘প্রি-প্ল্যানড মার্ডার’, কার্যত তাতে শিলমোহর পড়েছে। একইসঙ্গে খুনে ব?্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ঘটনার আগের দিন কলকাতার বড় বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে বানানো হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতদের থেকে দোকানটির সন্ধান পেয়ে তদন্তকারীরা সেখানে গিয়ে সত্যতা যাচাই করেছে বলেই সূত্রের খবর।
জামাকাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী কৃষ্ণপাল ও তাঁর সহযোগী করণ ভাগরামের থেকে ব্যবসার কমবেশি ৮ লক্ষ টাকা পেত। একথা গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই ধৃতদের থেকে জানতে পেরেছিল পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে, বিগত পাঁচ মাস ধরে বকেয়া এই টাকা পরিশোধ করতে ভাগরামকে বারবার চাপ দিচ্ছিল ধৃতরা। বিগত এক সপ্তাহ ধরে এই টাকা আদায়ের জন্য দু’পক্ষের বিবাদ চরমে ওঠে। এই সময়কালেই কৃষ্ণপাল ও করণের ধারণা হয় ‘হয়ত বকেয়া টাকা পাওয়া যাবে না’। তারপরই কফিতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে কৃষ্ণপাল লাইলন দড়ির সাহায্যে গলায় ফাঁস দেওয়ার পর ধারালো অস্ত্রের কোপ দিয়ে খুন করে বলেই জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তবে, করণও সন্দেহের বাইরে নেই। তারও খুনে ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ।
বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দ্রবদন ঝাঁ বলেন, “ধৃত দুজনের বয়ান যাচাই করার পাশাপাশি খুনের ঘটনায় কার কি ভূমিকা ছিল, অন্য কেউ যুক্ত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রথম যে হলুদ ট্যাক্সিতে ট্রলি নিয়ে নাগের বাজার পর্যন্ত গিয়েছিল, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে সেই ট্যাক্সি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ভাগারামের রাজস্থানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তাঁরা কলকাতা আসবে। খুব শীঘ্রই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। কিভাবে খুন করা হয়েছে, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট থেকে দেহ নিয়ে বেরিয়ে কোন পথে ঘোলার খেপরির বিল এলাকায় পৌঁছেছিলেন ধৃতরা, পুরোটাই ফের পুনর্নির্মাণ করা হবে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।