এই সময়: যদি হৃদযন্ত্র বিকল হয়, যদি জবাব দেয় ফুসফুস? এই ধরনের রোগকে গুরুতর বলেই চিহ্নিত করেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। শরীরর এই দুই যন্ত্র বিকল হয়ে পড়লে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হবে। রোগ প্রাণঘাতী হতে পারে। এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ বহন করে বিমা সংস্থাগুলি। কিন্তু যদি অন্য কোনও রোগের জন্য শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটে, আর সেই রোগ যদি প্রাণঘাতী হয়, তা হলে কি চিকিৎসার খরচ দেবে বিমা সংস্থা?
রোগের নাম যদি হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ), তা হলে এখানে চিকিৎসা যতই ব্যয়বহুল হোক না কেন, তা গ্যাঁটের কড়ি খরচ করেই করাতে হবে। বিদেশে কিন্তু বিমা সংস্থাগুলি এই রোগের চিকিৎসার খরচ দেয়। অথচ ওএসএ–র স্থান স্লিপ ডিজ়অর্ডারের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে। তাই আজ, শুক্রবার বিশ্ব ঘুম দিবসের প্রাক্কালে বিশেষজ্ঞরা দাবি তুলছেন, ওএসএ এবং স্লিপ ডিজ়অর্ডারের চিকিৎসাকেও আনতে হবে স্বাস্থ্যবিমার অধীনে।
শুধু ওএসএ–ই নয়, স্লিপ ডিজ়অর্ডার অর্থাৎ ঘুম সংক্রান্ত যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা খরচের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পেতে কোনও সমস্যা হয় না। অথচ চার দশকে পেরোনোর পরেও দেশের সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলি এখনও এই রোগের কভারেজ দিতে অস্বীকার করে। অথচ বিশেষজ্ঞরা এই রোগকে ‘নীরব মহামারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কলকাতার একটি স্লিপ ল্যাবের অধিকর্তা সোমনাথ মাইতি বলেন, ‘এই বিমা সংস্থাগুলি যখন হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ৫-১০ লাখ টাকা কভারেজে কোনও আপত্তি তোলে না। কিন্তু ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কোনও রোগী চিকিৎসা খরচ পান না। এই রোগের চিকিৎসা শুধু ব্যয়বহুলই নয়, এই দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’ তিনি জানান, স্লিপ স্টাডি করাতে ১৫–২০ হাজার খরচ পড়ে। ওএসএ–র চিকিৎসায় ব্যবহৃত সি–প্যাপ মেশিনের দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। এবং সেই মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণে বছরে গড়ে ২০–৩০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আক্ষেপ, স্বাস্থ্যবিমার অভাবে পুরো টাকাটাই রোগীর পকেট থেকে যায়।
একই সুর স্লিপ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ দাসের গলায়। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তাঁদের জীবনের কোনও না কোনও সময়ে ঘুম সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ এই রোগের কোনও চিকিৎসাই করান না। এমন একটি রোগের চিকিৎসাকে স্বাস্থ্যবিমার অধীনে আনা হলে, অধিকাংশ রোগী সঠিক চিকিৎসাটা করালে, দেশে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যান্সারের বার্ডেন অনেক কমে যাবে, সন্দেহ নেই।’ তিনি জানান, বিভিন্ন গবেষণা বলছে, মাঝবয়সেই (৪৫–৬০ বছর) এই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের স্লিপ ডিজ়অর্ডারে ভোগার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ। এবং ওএসএ–র সমস্যাটা গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে বেশি।
ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ হালদার বলেন, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া–সহ ঘুমের যাবতীয় সমস্যার চিকিৎসা না–হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সার্বিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে অনিবার্য ভাবে।’ বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, দেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। একটি বহুজাতিক এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট নির্মাতা সংস্থার তরফে কলকাতা–সহ দেশের ১০টি শহরে সমীক্ষা চালিয়ে এই ফলাফল পেয়েছে।