এই সময়, লাটাগুড়ি ও গোরুমারা: বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার উপর দোল উপলক্ষে শুক্র ও শনিবার ছুটি। তাই টানা তিন দিন বন্ধ থাকছে লাটাগুড়ি ও গোরুমারা এবং নেওড়া ভ্যালির জঙ্গল। এ দিকে তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়ে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা জঙ্গল লাগোয়া রিসর্ট আর হোটেলগুলিতে। কিন্তু জঙ্গল সাফারি বন্ধ থাকায় মুখ ভার পর্যটকদের। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে জঙ্গলের আশপাশে ঘুরে বেড়াবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।
হোলি উৎসবকে সামনে রেখে একটি বিশেষ জনজাতি শিকার উৎসব পালন করে থাকে। এই শিকার উৎসবের অজুহাতে যাতে কোনও বন্যপ্রাণীকে শিকার করা না হয়, তার জন্য অ্যান্টি-পোচিং স্পেশাল ডিউটি শুরু হয়েছে প্রতিটি জঙ্গলে। চোরাশিকার রুখতেই দোলের সময়ে দু’দিনের জন্য বন্ধ থাকছে গোরুমারা, চাপড়ামারি এবং নেওড়া ভ্যালি জঙ্গল। ১৪ এবং ১৫ মার্চ এই দু’দিন পর্যটকরা জঙ্গলের ভিতরে জিপসি সাফারি করতে পারবেন না, বন্ধ থাকবে হাতির পিঠে জঙ্গল ভ্রমণও।
এমনকী, জঙ্গলের গভীরে বনবাংলাতে রাত্রিযাপনও করতে পারবেন না পর্যটকেরা। বন দপ্তরের তরফে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এ দিকে দোল উপলক্ষে লাটাগুড়ি, গোরুমারা, মূর্তি–সহ পাশ্ববর্তী এলাকার সমস্ত রিসর্টের বুকিং প্রায় সম্পূর্ণ। অধিকাংশ রিসর্টেই আর ঘর খালি নেই। বৃহস্পতিবার থেকেই প্রচুর পর্যটক লাটাগুড়িতে এসেছেন। তবে জঙ্গল বন্ধের খবর শুনে সবাই মুষড়ে পড়েছেন। ডুয়ার্সে আসা এক পর্যটক অভিজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘হোলির দু’দিন আগেই ডুয়ার্সে এসেছি। দু’দিন জঙ্গল বন্ধ, তাই আগেভাগেই জঙ্গল সাফারি সেরে ফেলেছি।’ আরেক পর্যটক সুতপা দে বলেন, ‘লাটাগুড়িতে সপরিবারে দু’দিনের বুকিং করেছি। কিন্তু জঙ্গল যেতে পারছি ন। তাই মন খারাপ। বাইরে থেকেই জঙ্গল উপভোগ করব।’
তবে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ না করতেও পারলেও বাইরে থেকে অরণ্যের স্বাদ নিতে পারবেন পর্যটকেরা। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, ‘গোরুমারার ও লাটাগুড়ির জঙ্গল দু’দিন বন্ধ। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে লাটাগুড়ির বেশ কয়েকটি জায়গায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পর্যটকরাও সামিল হতে পারবেন।’ তিন দিন জঙ্গল বন্ধ থাকার কারণে বুধবার শেষ শিফটে লাটাগুড়ির জঙ্গল সাফারিতে পর্যটকের ব্যাপক ভিড় দেখা গিয়েছে। স্থানীয় ইকো গাইড কমল রায় বলেন, ‘সকাল থেকেই ভিড় ছিল লাটাগুড়ি জঙ্গল সাফারিতে।’
চোরাশিকার রুখতে বন দপ্তরের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা–সহ যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যরা প্রচারে নেমেছেন। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাসের কর্মকর্তা নফসর আলি বলেন, ‘দোল এবং হোলির সময় একটি জনজাতির মানুষ শিকার উৎসব পালন করে থাকে। আমরা বনবস্তি, জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছি। যাতে শিকারের নামে কেউ বন্যপ্রাণী হত্যা না করেন।’ বৃ্হস্পতিবার সকাল থেকেই গোরুমারার জঙ্গলকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। কুনকি হাতির পাশাপাশি হেঁটে এবং নজরমিনার থেকে চলছে নজরদারি। গোরুমারার প্রশিক্ষিত কুকুর অরল্যান্ডোকে নিয়ে সকাল থেকেই গোরুমারা জঙ্গল ঘেঁষা বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে টহল। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়ক–সহ বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চলে তল্লাশি। জঙ্গলের পাশে নদী সংলগ্ন এলাকাতেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, ‘হোলির আগে গোরুমারার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছ। হোলির কথা কথা মাথায় রেখে গোরুমারার জঙ্গলে দু’দিন প্রবেশ বন্ধ থাকছে। চোরাশিকার রুখতে বনকর্মীরা টহলদারি চালাচ্ছেন।’ জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগের সহকারী বানাধিকারীক রাজীব দে বলেন, ‘শিকার উৎসবকে সামনে রেখে জঙ্গলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে পর্যটকদের জন্য দু’দিন বন্ধ থাকবে জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল।’