এই সময়: কতই বা বয়স হবে ওদের — এই পাঁচ কী ছয়! খেলে বেড়ানোর এই তো বয়স! কিন্তু এই বয়সেই ওরা ইটভাটার শ্রমিক। মজদুরি করলেও তাদের কোনও মজুরি নেই। এক একজন হয়তো মাথায় বড়জোর চারটে থান ইট বইতে পারে। তাতেই সাহায্য হয় বাবা–মায়ের।
কারণ, ওদের মা-বাবারাও কাজ করেন ওই ইট ভাটায়। মা-বাবারা কি ঠিকঠাক মজুরি পান? পান। কিন্তু, নিয়মিত নয়। যে টাকা পান, সেটাই কি তাঁদের পাওয়ার কথা। সেটাই কি সরকারের বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম মজুরি। তাঁরা অবশ্য সেটাও জানেন না।
বৃহস্পতিবারের সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পোলেরহাটে দু’টি ইটভাটায় হানা দিয়ে উদ্ধার করা হলো ২১ শিশু-সহ এমন ৩৬ জন শ্রমিককে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন যৌথ অভিযান চালায় জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (ডিএলএসএ) এবং পুলিশ। অভিযোগ, ওই শ্রমিকদের কৃতদাসের মতো খাটানো হচ্ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে পুলিশ-সহ ডিএলএসএ-র আধিকারিকেরা যখন প্রথম ইটভাটায় পৌঁছন, দেখেন, চুড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। ডিএলএসএ-র এক কর্মী জানিয়েছেন, বড়দের সঙ্গে কাজ করছিল পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কিশোর কিশোরীরা। শ্রমিকদের বেশিরভাগই জানান, ভোর ৩টে থেকে তাঁদের কাজ শুরু করতে বাধ্য করা হয়। বেশ কয়েকজন জানান, মাসের পর মাস তাঁদের মজুরি দেওয়া হয় না।
তাঁদের মজুরি কত, কাজের নিয়ম বা শর্তই বা কী — তাও জানাতে পারেননি ওই শ্রমিকেরা। ওই ইটভাটা থেকে মোট ৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ২০জনই শিশু। এঁদের সকলেই বিহারের বাসিন্দা। এর পরেই ওই দলটি হানা দেয় দ্বিতীয় ইটভাটাতে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ছয় জন শ্রমিককে। যার মধ্যে এক জন শিশু রয়েছে। তাঁরা সকলেই ওডিশার বাসিন্দা। জেলা শ্রম দপ্তর থেকে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযানের সময়ে স্থানীয় কিছু মানুষ বিক্ষোভ দেখান বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁরা উদ্ধার করা শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা আদতে ইটভাটা মালিকদেরই লোক। এই সময়ে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ উদ্ধার করা শ্রমিকদের দ্রুত একটি স্কুল বিল্ডিংয়ে নিয়ে গিয়ে রাখে। জানা গিয়েছে, শিশু–সহ শ্রমিকদের এই উদ্ধারের কথা এ দিনই স্থানীয় আদালতে জানানো হয়। তারপরে আদালতের নির্দেশে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) উদ্ধার করা শিশুদের দেখভাল করতে শুরু করে। আদালতের নির্দেশে তাদের হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ ও শ্রম দপ্তর তদন্ত করে দেখুক, ওই শ্রমিকদের ঋণ দিয়ে সেই জালে আটকে কৃতদাসের মতো খাটতে বাধ্য করা হচ্ছিল কি না। যদি তা হয়, তা হলে তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক। জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে, যাতে ‘সেন্ট্রাল সেক্টর স্কিম ফর রিহ্যাবিলিটেশন অফ বন্ডেড লেবার-২০১৬’ আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
‘শিশু শ্রম আইন- ১৯৮৬’ অনুযায়ী ইটভাটা মালিক এবং অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই দাবিও জানানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী আলমগীর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি যাতে নির্দিষ্ট আইন অনুযায়ী উদ্ধার করা শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।’