• বিদেশি গাছের ফলের বীজ থেকে এ বার আসছে গেরুয়া আবির
    এই সময় | ১৪ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, বহরমপুর: এত দিন পর্যন্ত পরিচিত ছিল লাল, নীল, সবুজ, হলুদ রঙের আবির। আজ, শুক্রবার দোল উৎসবে সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের নতুন সংযোজন গেরুয়া আবির। নতুন এই আবিরের আত্মপ্রকাশ নিয়ে উৎসাহী কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী থেকে বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, গেরুয়া রঙের আবির মন কেড়ে নেবে সকলের।

    কী ভাবে তৈরি হচ্ছে গেরুয়া আবির? কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী সুজন বিশ্বাসের মন্তব্য, ‘সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনে ৫০টি প্রজাতির গাছ-গাছালি রয়েছে। তার মধ্যে সিঁদুর বা সিন্দুর গাছের ফলের বীজ থেকে গেরুয়া বর্ণের রঞ্জক সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাকে কর্নফ্লাওয়ারের সঙ্গে মিশিয়ে এই নতুন ভেষজ আবির তৈরি হচ্ছে।’

    কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যানপালন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চন্দা পারিয়া বলছেন, ‘এই গাছের ফলগুলি পেকে গিয়ে ফেটে যাওয়ার পরে তার ভিতর থেকে সংগ্রহ করা হয় বীজ। প্রত্যেকটি বীজের গায়ে পাতলা মোমের মতো গেরুয়া রঙের খোসা থাকে। সেই খোসা ছাড়িয়ে শুকিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেটাকে বেটে নিয়ে গেরুয়া রঙের আবির তৈরি করা হচ্ছে।’ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এই আবির তৈরি করছেন।

    সিঁদুর বা সিন্দুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বিক্সা ওরেলানা’। এটি মূলত আমেরিকা অঞ্চলের ছোট গুল্মজাতীয় গাছ। গাছের ফলগুলি হয়ে থাকে লাল রঙের। এর বীজ থেকে যে গেরুয়া রঙের রঞ্জক পাওয়া যায়, তা কাজে লাগিয়ে ইউরোপের বেশ কিছু দেশে লিপস্টিক তৈরি হয়। তাই অনেক সময়ে এই গাছকে ‘লিপস্টিক ট্রি’-ও বলা হয়ে থাকে।

    কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যানপালন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চন্দা পারিয়া দিয়েছেন আরও কিছু তথ্য। তিনি জানাচ্ছেন, আবির তৈরিতে অ্যারারুট অথবা ট্যালকম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অ্যারারুট ব্যবহৃত হলে ত্বকে তেমন চকচকে ভাব দেখা যায় না। তাই দাম বেশি পড়লেও আবির তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কর্নফ্লাওয়ার। সেই আবির লাগানো হলে ত্বকে একটা চকচকে ভাব দেখা যায়। সে ভাবেই সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র ভেষজ আবির তৈরি করে থাকে।

    প্রত্যেক বছর এই ভেষজ আবির পাঠানো হয় বেলুড় মঠের স্বামীজি এবং অন্যান্য আশ্রমিকদের কাছে। দোলের দিনে রামকৃষ্ণদেব, স্বামী বিবেকানন্দ এবং মা সারদার পায়ে সেই ভেষজ আবির ছুঁইয়ে সূচনা হয় সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের দোল উৎসব। ২০২৪ সালে ব্যবসায়িক ভাবে এই আবির বিক্রি হয়েছিল বহরমপুর বাজারে। ২০০-২৫০ টাকা কিলো দরে সেই আবির বিক্রি করা হয়।

    কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান সুজন বিশ্বাস বলছিলেন, ‘বাজারে সাধারণত যে ধরনের আবির বিক্রি হয়, তাতে অনেক ধরনের রাসায়নিক মিশ্রণ থাকে। এতে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আমরা গাঁদা, জবা, পলাশ, শিমুল ফুলের পাশাপাশি বিট, গাজর ও কমলালেবুর খোসা থেকে রং সংগ্রহ করে ভেষজ আবির তৈরি করে তা বাজারজাত করার চেষ্টা করছি।’ সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ বিশ্বময়ানন্দজি-র মন্তব্য, ‘বিক্সা ওরেলানা গাছ আমি নিয়ে এসেছিলাম নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ থেকে। বহরমপুর বন দফতর থেকেও আনিয়ে আশ্রমে লাগিয়েছিলাম। তা-ও কয়েক বছর হয়ে গেল। ওই গাছের ফলের বীজ থেকে ভেষজ আবির তৈরি হচ্ছে। তা দিয়ে শাড়িতেও রং করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)