• ধর্মের খেলা বন্ধ হোক, সরব সিপিএম-কংগ্রেস
    আনন্দবাজার | ১৪ মার্চ ২০২৫
  • রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে ‘ছক কষে’ বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টায় নেমেছে এবং তাতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস মদত দিচ্ছে, এই অভিযোগে সরব হল সিপিএম ও কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সংখ্যালঘু বিধায়কদের ‘চ্যাংদোলা’ করে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার এখনও কেন ব্যবস্থা নেয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছে দু’পক্ষই। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই কিছু থানায় অভিযোগ করেছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ব্যবস্থা না হলে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন থানায় তাঁরাও অভিযোগ করবেন।

    দু’দিন আগেই বিধানসভার বাইরে ওই হুমকি দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার পাল্টা কার্যত একই সুরে হুমকির স্বর শোনা গিয়েছে হুমায়ুন কবীর-সহ শাসক দলের বিধায়কদের গলাতেও। এই সূত্রেই দলের রাজ্য দফতরে সেলিমের দাবি, “বিরোধী দলনেতার বক্তব্য অসাংবিধানিক। নির্বাচিত বিধায়ক এই ভাবে কথা বলতে পারেন না। যে রাজ্য সরকার বিরোধীদের কথায়-কথায় মামলা দেয়, তারা এখনও পদক্ষেপ করেনি। উল্টে তাদের দলের নেতারা হুমকি দিচ্ছেন। ধর্মের নামে খেলা চলছে!” দুই পক্ষকে এক পঙ্‌ক্তিতে বসিয়ে এবং সতর্ক থাকার বার্তা দিয়ে সেলিমের অভিযোগ, “তৃণমূল ও বিজেপি, উভয় পক্ষই আরএসএসের তৈরি করে দেওয়া ছকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে। মেদিনীপুর থেকে যাদবপুর, নানা ঘটনা ঘটছে। আলুর দাম না-পাওয়া থেকে শুরু করে চাকরির অভাব, নানা সমস্যায় মানুষ সঙ্কটে। তার মধ্যে দুই ধর্মের সঙ্কট দেখিয়ে দু’দল নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ২০১১ থেকে রাজ্যে বিধানসভায় সংখ্যালঘু বিধায়কদের প্রতিনিধিত্ব কমেছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করা ‘সুযোগ’ কাজে লাগিয়ে বিজেপি তোষণের কথা বলছে।

    একই ভাবে সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও। তাঁর দাবি, “আর জি কর-কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই ভাবেই বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মামলা করা উচিত কলকাতা হাই কোর্টের।” রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী দলকে নিশানা করে তাঁর অভিযোগ, “বেশ কিছু রাজ্যেই বিজেপি একই রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলায় যাঁরা তৃণমূল থেকে পরে বিজেপিতে গিয়েছেন, তাঁরা আরও বেশি করে উস্কানিমূলক কথা বলছেন। তৃণমূল ব্যবস্থা না নিয়ে ও চুপ থেকে সংখ্যালঘুদের সমর্থন পাওয়ার কথা ভাবছে। মেরুকরণের স্বার্থেই দু’পক্ষ চলছে।” এই পরিস্থিতিতে অশান্তি বাধলে সবাই যে তাতে সমস্যায় পড়বেন, তা স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন শুভঙ্কর।

    তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে মেরুকরণ ও উস্কানি ছড়ানোর অভিযোগে সরব হয়েছে বামফ্রন্টও। পাশাপাশি, ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বিবৃতি দিয়ে রমজান চলার সঙ্গেই শুক্রবার দোল, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘সম্প্রীতি বজায় রেখে, রাজ্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসব পালনের জন্য রাজ্যবাসীর কাছে বামফ্রন্ট আহ্বান জানাচ্ছে।’ প্ররোচনায় পা না দেওয়া এবং সর্বত্র বাম-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন বিমান। ফ্রন্টের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে ‘ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি’ হচ্ছে। এই সূত্রেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ভূমিকাকেও নিশানা করেছেন ফ্রন্ট নেতৃত্ব।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)