দিগন্ত মান্না, হলদিয়া
প্রথম বার হলদিয়ায় সিপিএমের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন। দ্বিতীয় বার বিজেপির টিকিটে জিতে হলদিয়া থেকে আবার বিধায়ক হন তাপসী মণ্ডল। পদ্ম ছেড়ে এখন তিনি ঘাসফুলে। এই পরিস্থিতিতে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে, ২০২৬–এর বিধানসভায় হলদিয়ায় তাপসীকেই টিকিট দিতে পারে তৃণমূল।
আর তিনি জিতলে পর পর তিন বার, তিন ভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে জিতবেন। তাঁকে টিকিট দিলে এমন বিরল নজির তৈরির সম্ভাবনা যথেষ্ট বলে মনে করছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনৈতিক মহল। এ দিকে, তাপসীর দল বদলের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন ‘কটাক্ষ’ ঘোরাফেরা করছে। তবে তাপসী জানিয়েছেন, এ সব মন্তব্য নিয়ে তিনি ভাবিত নন।
এক সময়ে তাপসী হলদিয়া পুরসভায় সিপিএমের পুরপ্রতিনিধি ছিলেন। ২০১৬–য় দ্বিতীয় বার তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময়ে জোড়াফুলের প্রবল হাওয়াতেও হলদিয়ায় সিপিএমের গড় অটুট রেখেছিলেন তাপসী। ২০২০–তে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তিনিও বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনে হলদিয়া কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে দ্বিতীয় বার বিধায়ক হন তিনি।
২০২৬–এর বিধানসভা ভোটের এক বছর আগে ফের দল বদল। এ বার তৃণমূলে। প্রশ্ন উঠেছে, হলদিয়ায় বিজেপিকে টক্কর দিতে আগামী বিধানসভায় তাঁকেই কি টিকিট দেবে তৃণমূল? তাপসী অবশ্য এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কথায়, ‘দল আমাকে টিকিট দিলে আমি আবার হলদিয়া থেকে জিতব। হলদিয়ার মানুষ আমার পাশে আছে। দল যে দিন বলবে, সে দিন থেকেই তৃণমূলের জন্য ময়দানে নামব।’
তৃণমূলে আসার আগেও তাপসী বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ছিলেন। সূত্রের খবর, বিজেপিকে ধরাশায়ী করতে তাপসীর সেই অভিজ্ঞতাকে সংগঠনের কাজে পুরোপুরি লাগাতে চায় তৃণমূল।
তৃণমূলের তমলুক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘তাপসী বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হয়েও শুভেন্দুদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের দলে এসেছেন। এটা আমাদের নৈতিক জয়। ওঁর আত্মবিশ্বাস আছে। হলদিয়ায় মানুষের সঙ্গে তাপসীর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।’
গত মঙ্গলবার তাপসীর ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি বদলে তৃণমূলের প্রতীক পোস্ট করা হয়েছিল। এরপর তাপসীকে উদ্দেশ করে লাগাতার কটূক্তি শুরু হয় ফেসবুকে। কয়েক ঘণ্টা পরে তৃণমূলের প্রতীক সরিয়ে তাপসীর ছবি পোস্ট করা হয়। সেই ছবিতেও তাপসীকে উদ্দেশ করে নানারকম কটূক্তি করা হয় বলে অভিযোগ।
তাপসী অবশ্য বলেছেন, ‘আমি নিজে ফেসবুক অপারেট করি না। অন্য একজন করেন। গতকাল তিনিই তৃণমূলের প্রতীক পোস্ট করেছিলেন। আবার তুলেও নেন। আসলে আমার ফেসবুক প্রোফাইলটি নতুন ভাবে সাজানো হবে। পুরোনো সমস্ত পোস্ট সরিয়ে নেওয়া হবে। সেই কাজ চলছে। বিজেপির কিছু পেড সার্ভেন্ট ফেসবুকে আমার নামে বাজে কথা লিখছে। ও সব গায়ে মাখি না।’
প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘গোলমালে’র জেরেই তিনি দল ছেড়েছেন, এমন কথাও উঠে এসেছে। সে প্রসঙ্গে তাপসী বলেন, ‘তিনি (অভিজিৎ) আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন। আমি মনে করতাম না। আমি দায়িত্ব নিয়ে ওঁকে জিতিয়েছিলাম। আমি যখন বিজেপিতে ছিলাম, অভিজিৎ সম্পর্কে যেখানে যেখানে যা যা জানানোর জানিয়েছিলাম। দল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বা ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই দল ও–ভাবেই চলবে।’