যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আচমকা বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলো কেন তৎপর হয়ে উঠল, সে বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করলেন এ রাজ্যে গোয়েন্দারা। এমনকী, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। কারণ, ভারতের একটি রাজ্যের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ও পারের ছাত্রসংগঠনগুলো। ফলে বিষয়টি একেবারেই হালকা ভাবে নিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
গত বছর অগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকার। বাংলাদেশে ‘কোটা বিরোধী’ ছাত্র আন্দোলন থেকেই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। পড়শী দেশে এখনও অস্থিরতার মেঘ পুরোপুরি কাটেনি। গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন, এ রাজ্যের ছাত্র নির্বাচন এবং আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কেন এত মাথা ঘামাচ্ছে বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলি, কেনই বা তারা এ রাজ্যের সরকারকে টার্গেট করছে?
গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছে বাম এবং অতিবাম ছাত্র সংগঠনগুলি। তা নিয়ে মাঝেমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস চত্বর। তাদের সমর্থনে একই সুর শোনা যাচ্ছে পড়শী দেশের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের গলাতেও। পয়লা মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ব্যবহার করা গাড়িতে প্রথমবর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায় আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি জারি করেছে বাংলাদেশের তিন ছাত্র সংগঠন। পুলিশের হাতেও এসেছে সেই তথ্য।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। ওই পদে থাকতে পারেন না তিনি।’ ওই সংগঠনটি আবার আওয়ামি লিগকে স্বৈরাচারী বলে দাবি করে বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামি লিগের মতো এ রাজ্যের তৃণমূল সরকারের পতনের পক্ষে সওয়াল করেছে ওই সংগঠনটি।
অন্যদিকে, ইন্দ্রানুজ রায়কে বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য বলে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছে বাংলাদেশের ‘বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী’। প্রায় একই বিবৃতি দিয়েছে সে দেশের আরেকটি ছাত্র সংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র–যুব আন্দোলন’।
যাদবপুরের ঘটনার পরে পুলিশ অভিযোগ না নেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইন্দ্রানুজ। পুলিশ–প্রশাসনের উদ্দেশে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘আপনাদের ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারত৷ এই ঘটনা নিয়ে কেন কোনও আগাম বার্তা ছিল না প্রশাসনের কাছে?’ এ বার বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলি যাদবপুরের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ায় খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।